১০ লাখ টাকার গাছ কেটে বেচে দিলেন বন কর্মকর্তা

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৩৫০ মিটার রাস্তায় লাগানো ১০ লাখ টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. জহিরুল কবির শাহিনের বিরুদ্ধে। ওই ইউনিয়নের ডোকলাখালী বক্স কালভার্ট হতে লেমুয়া মাদরাসা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সামাজিক বনায়নের মধ্যে মাত্র ২১০ মিটার রাস্তার গাছ কাটার টেন্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু বন কর্মকর্তার অতিরিক্ত গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে তদন্তে।
স্থানীয় সূত্র জানা যায়, উপকূলীয় সবুজ বেস্টনী প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের ডোকলাখালী বক্স কালভার্ট থেকে লেমুয়া মাদরাসা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার বাঁধে বাগান তৈরি করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় সড়কের উন্নয়ন স্বার্থে ২১০ মিটার রাস্তায় বন বিভাগের বিভিন্ন প্রজাতির রেইনট্রি, বিভিন্ন ফলের গাছ, আকাশ মনি, মেহগনিসহ ১৫৩টি গাছ অপসারণের লক্ষ্যে মিজার্গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় রেজুলেশন অনুযায়ী টেন্ডার দেয়। নিয়মানুসারে সবোর্চ্চ দরদাতা হিসেবে ৫ লাখ টাকায় ওই গাছ ক্রয় করেন ঠিকাদার মো. আলমগীর হাসেন। অভিযোগ ওঠে, ২১০ মিটার রাস্তার ১৫৩টি গাছ কাটার কথা টেন্ডার উল্লেখ থাকলেও ব্যক্তি মালিকাধীন ৬৪টি গাছসহ অতিরিক্ত আরো ৩৫০ মিটার রাস্তার ৩ শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বন কর্মকর্তার যোগসাজশে কেটে নেন ওই গাছ ব্যবসায়ী, যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা।
মালিকানাধীন ৬৪টি গাছসহ অতিরিক্ত ৩৫০ মিটার রাস্তার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নেয়ার সময় এলাকাবাসী বাঁধা দিলে উপজেলা বন কর্মকর্তা ও ওই ঠিকাদার এলাকাবাসীকে মামলা দেয়াসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান। বিষয়টি এলাকাবাসী উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি গত মঙ্গলবার বিকালে সরজমিনে গিয়ে এর সত্যতার প্রমাণ পান। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তাক অবহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পটুয়াখালী সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তাসহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গতকাল বুধবার তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এলাকার ভুক্তভাগী শানু মোল্লা, নুর ইসলাম মৃধা, সোহাগ হাসেন বলেন, আমাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ এবং দরপত্রের বাইরের গাছগুলো কাটতে বাধা দিলে আমাদের মামলা দেয়ার হুমকি দেন বন কর্মকর্তা ও ঠিকাদার। এছাড়াও আমাদের মালিকানার কেটে ফেলা গাছগুলা ফেরত চাইলে তিনি আমাদর কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন।
এ বিষয় ঠিকাদার আলমগীর হোসেন বলেন, আমাকে বন কর্মকর্তা যে গাছগুলো দেখিয়ে দিয়েছেন, আমি সেগুলো কেটেছি।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক পটুয়াখালী সহকারী বন সংরক্ষক মতিয়ার রহমান বুধবার সরেজমিন তদন্ত শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, দরপত্রের বাইরে গাছ কাটার অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু এখন বলা যাচ্ছে না।
উপজলা বন কর্মকতা মো. জহিরুল কবির শাহীন বলেন, দরপত্রের বাইরে কিছু গাছ কাটা হয়েছে। তবে গাছ দেয়া বা নেয়ার ব্যাপারে আমি কারো কাছে থেকে টাকা দাবি করিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. তানিয়া ফেরদৌস বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার বিকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দরপত্রের বাইরে গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনার বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গতকাল বুধবার ওই তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করেছে।
এইচকেআর