যৌবন হারাচ্ছে আমতলীর বাশবুনিয়া নদী

বরগুনার আমতলীর উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ঘেষে নিরন্তর বয়ে চলা বাঁশবুনিয়া নদী ক্রমশই যৌবন হারাচ্ছে। বাঁশবুনিয়া নদীতে পানি না থাকায় তলদেশে ধান চাষ করা হচ্ছে।
এক সময়ের খড়স্রোতা এই নদীটি সময়ের বির্বতনে দখল ও দূষণের কবলে পড়ে এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। চৈত্র মাস আসার আগেই প্রমত্তা বাঁশবুনিয়া তাঁর জৌলুস যৌবন হারিয়ে পানি শূন্যতায় ভূগছে। আমতলী সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী হলদিয়া ইউনিয়নের সুবান্ধী পর্যন্ত দীর্ঘ এই নদীটি তাঁর ঐতিহ্য হারিয়ে মৃত্যুপ্রান্তে উপণিত। একটি নদীর জন্য যতটুকু পানি প্রবাহ থাকার প্রয়োজন তা নেই বললেই চলে। যতটুকু পানি আছে তা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি প্রাচীণ খড়স্রোতা নদী। অথচ বেশিদিন আগের কথা নয় যখন নদীর বুক জুড়ে নিরন্তর বয়ে চলতো ছল ছল পানি। আর জেলেদের কর্মব্যস্ত দেখা যেত মাছ শিকারে। নদীতে গুণটানা নৌকা চলতে দেখা যেত। বাঁশবুনিয়া অবাহিকায় এই নদীপথেই বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ নৌকা পথে শহরে আসতো। কিন্তু সময়ের বির্বতনে ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদী পানি শূন্য হয়ে পরায় বুক জুড়ে জেগে উঠে ধুধু বালু চর।
আর এ সুযোগে জমির মালিকরা ধান,সরিষাসহ নানা ফসল চাষ করতে থাকে। বর্ষা মওসুমে শুধু নদীটি পানিতে টইটুম্বুর হয়ে তাঁর ভরা যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসার আগেই শুকিয়ে মৃত্যু নদীতে পরিণিত হয়। বর্তমানে নদীর দ-ুতৃতীয়াংশ এলাকাই শুকিয়ে গেছে। সামান্য একটু অংশ জুড়ে হাটু পানি আছে। নদীর এমন গতিপথ ও পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় আমতলীর অর্থনীতিতেও বিরুপ প্রভাব পরেছে। একদিকে যেমন জেলেরা মৎস শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তেমনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাথে সাথে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ব্যবসা বাণিজ্যে চরম সমস্যা হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে বড় বড় বর্জ্র্য নৌকায় ধান,পাট,সরিষাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেওয়া করা হতো। নদীর বুক জুড়ে বারো মাস পানি থাকতো। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পরতে দেখা যেত। আর পানি ভিতরে শুশক মাঝে মধ্যেই ঝাপুড়ি দিয়ে লাফিয়ে বেড়াতো। পালতোলা ও গুণটানা নৌকা হরহামেশাই দেখা মিলতো। হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া. ধানখালী, নলুয়াবগী ইউনিয়নের মানুষ বাঁশবুনিয়া নদীপথেই উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ মালামাল আনা নেওয়া করতো। কিš‘ নদীটির এই দুরবস্থার কারণে এসব ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ এখন চরম বিঘ্নিত হচ্ছে।
নদীটি নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি নদী তীরে গড়ে উঠা শতশত ঘরবাড়ী মরে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। নদীতে গোসল করে নানা রকম চর্মরোগে ভূগছে নদী তীরের শত শত মানুষ।
হলদিয়া ইউনিয়নের প্রবিন ব্যক্তি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এই নদী দিয়ে আমরা আমতলী পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন সৌকা লঞ্চে আসা যাওয়া করতাম। নদী দখলের কারনে এখন নদী পথে যাতায়াত বন্দ হয়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাবো।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন সরোজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পিএম