হাতেনাতে ধরা পরকীয়া প্রেমিক, অতঃপর যত কাণ্ড


রাতের আঁধারে অন্যের স্ত্রী নিয়ে পালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে পরকীয়া প্রেমিক। অতঃপর শুরু হয় যত কাণ্ড। প্রথমে গণপিটুনি, পরে শিকল দিয়ে বাঁধা হয় প্রেমিকের কোমর। হাত বাঁধা হয় রশি দিয়ে। গলায় পরানো হয় জুতার মালা।
একপর্যায় বসানো হয় সালিশ বৈঠক। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয় বেত্রাঘাতের; ধার্য করা হয় জরিমানা।
রোববার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা গ্রামে। গলায় জুতার মালা পরিয়ে রাখার এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘এমডি রুমান খান’নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দুই মিনিটের দুইটি ভিডিও পাওয়া যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়- মধ্য বয়সী ওই পরকীয়া প্রেমিকের গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে কোমর। রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে হাত। কিছু লোকজন তাকে ঘিরে রেখেছেন। এদের মধ্যে একজন রশি, আরেকজন শিকল ধরে রেখেছেন। আবার একজন এসে তার দুই গালে জুতা চেপে ধরে। এছাড়াও হয় অনেক কাণ্ড।
জানা গেছে, পরকীয়া ওই প্রেমিকের নাম মিজানুর তালুকদার (৩৫)। তিনি গলাচিপা উপজেলার গোলখালী এলাকার সোহরাব তালুকদারের ছেলে। তার দুই সন্তান আছে। কিন্তু গত বছর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা গ্রামে তরমুজ আবাদ করতে এসে তিন সন্তানের এক জননীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায় মিজানুর।
রোববার রাত সাড়ে ১১টায় ওই মহিলাকে নিয়ে ট্রলারযোগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন মিজানুরকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এরপর মিজানুরের গলায় জুতার মালা পরিয়ে শিকল এবং রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়।
সূত্রমতে, শেষ রাতে পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে নিয়ে চরলতা গ্রামের এক বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। এতে প্রধান সালিশকারকের ভূমিকায় ছিলেন চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর (চিনাবুনিয়া-চরলতা) ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য জলিল ফকির। তিনিই পরকীয়া প্রেমিক এবং সহযোগীদের জরিমানা ধার্য করেন। কেউ বলছেন সেই জরিমানা এক লাখ। কেউ বলছেন এক লাখ ৬০ হাজার টাকা; কিন্তু জরিমানার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর (চিনাবুনিয়া-চরলতা) ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য জলিল ফকির বলেন, স্থানীয় লোকজন মারধর করছে- এই পর্যন্তই। জুতার মালা পরাইছে কিনা ওই সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমি অনেক পরে গেছি। ওই ছেলেকে তার পক্ষ নিয়ে গেছে। মেয়েকে স্বামী নেয়নি, মেয়ের বাড়ির লোকেরা নিছে। কিন্তু কোনো জরিমানা করি নাই। ওটা ওদের একটা প্রেসারের (চাপে) মধ্যে রাখা হইছে। ও রকম আসলেই কিছু না।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে যেভাবে বলছেন, সেভাবে মিলাইয়া ঝিলাইয়া দিয়া আসছি। স্থানীয়ভাবে ম্যাচুয়াল করছি, আরও ৫-৭ জন ছিল। মহিলা মেম্বারের স্বামী বাবুল ছিল।
একপর্যায় তিনি বলেন, যারা মোবাইল নম্বর দিছে, যারা প্রশ্রয় দিছে তারা অপরাধী। মিলাইয়া ঝিলাইয়া একটা কিছু করছি। সামান্য কিছু হয়তো করা হয়েছে, ওটাও থাকবে না। ওটাও রাখা যাবে না পরে চিন্তা করছি। দুইজন চৌকিদার পোলাপানের খরচ আছে। এরকম একটা চিন্তা করছি নেওয়া যেতে পারে, ওরকম না ঠিক আছে।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকা চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আসমা বেগমের স্বামী বাবুল বলেন, সালিশে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিল। যার ভাগে যেরকম বেত (বেত্রাঘাত) তাকে সেভাবে দেওয়া হয়েছে। ৩-৪ লাখ টাকা জরিমানার চিন্তা-ভাবনা করছিল; কিন্তু পরে জরিমানা বাদ। বেত দেওয়া হয়েছে। ছেলের ৫০, মহিলার ১০০। আর তিনজনকে ১০টি করে বেত দেওয়া হয়েছে। এখানে একটু বিবেচনা করা হয়েছে। ছেলেটাকে ধরেই লোকজন পিটাইছে। তাই তাকে একটু কম বেত দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এসএম
