ঢাকা রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news

আমতলীতে সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত আশ্রয়ণের ৫ শতাধিক ঘর

আমতলীতে সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত আশ্রয়ণের ৫ শতাধিক ঘর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার আমতলী উপজেলায় আশ্রয়ণের ৫৫টি ব্যারাকের ৫৫০টি ঘর সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত হওয়ায় লতাপাতায় আগাছায় ভরে গেছে।
বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ।  ঘরের দরজা, জানালা এবং চালার টিনগুলো মরিচা ধরে খসে পরেছে। ঘরে মানুষ না থাকার সুযোগে অনেক জায়গায় দুবৃত্তরা রাতের আধারে লাখ লাখ টাকা মূল্যের টিন লোহার এঙ্গেল খুলে নিয়ে গেছে। ঘরগুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ বসবাসরতদের।

জানা গেছে, নদীভাঙনে গৃহহারা ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর আবাসনের জন্য ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গৃহনির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আশ্রয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর জাপান সরকারের সহায়তায় নির্মাণ করা হয় ব্যারাক হাউস নামে আরেকটি প্রকল্প।

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, আমতলী উপজেলায় ৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫৫টি ব্যারাকে ৫৫০টি ঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসকল ঘর সংস্কার না করায় বর্তমানে মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরেছে।
অধিকাংশ ঘরে এখন আর কোন পরিবার বসবাস করে না। গুলিশাখালীর কালিবাড়ী ১০টি ও হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটের পূর্বপাশে নির্মিত ঘরে ২০টি পরিবারসহ মোট ৩০টি পরিবার থাকার কথা এখন কেউ নেই। ব্যারক দুটি খালি পরে আছে।

কালিবাড়ি আশ্রয়নের ঘরের বেড়ার টিন সব খুলে নিয়ে গেছে দুবৃত্তরা। আঠারগাছিয়া ইউপির  গোলবুনিয়া গ্রামের স্লুইজ গেট সংলগ্ন আশ্রয়নের ১০টি ঘরের অবস্থা। এখানে ১০ টি পরিবারের থাকার কথা আছে ১টি পরিবার। এখানের দরজা জানালা এবং চালার টিন খুলে নিয়ে গেছে চোরে। ফাকা স্ট্রাকচার পরে আছে।
একই অবস্থা আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের মধ্য যুগিয়া ৪টি ব্যারাক হাউজের ৪০ ঘরে এখন আর কেউ বসবাস করে না। সেখানের দরজা জানালা টিন সব চুরি হয়ে গেছে।একই অবস্থা আমতলী সদর ইউনিয়নের চারঘাট, গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া এবং হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নের ঘরের। কালিবাড়ি এবং দক্ষিণ পশ্চিম আমতলীর গোলবুনিয়া আশ্রয়নে ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের কিছুই নেই। ফাঁকা পরে আছে বেড়াবিহীন ঘরগুলো।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নের ঘর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখানের অবস্থা খুব ভয়াবহ। ১৫টি ব্যারাকে ১৫০টি পরিবারের বসবাসের কথা। আছে মাত্র হাতে গোনা ১০-১১ টি পরিবার। ভয়াবহ কষ্টের কারনে তারাও চলে যেতে পারে যে কোন সময় । এখানের ১০ টি ব্যারাকের কোন ঘরের চালার টিন নেই।
যাও আছে তা ফুটো হয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি পরে। রোদের সময় আবার টিনের ছিদ্র দিয়ে রৌদ্র প্রবেশ করে ঘরে। নির্মানের পর সংস্কার না করায়, দরজা জানালা খুলে পরে গেছে। অধিকাংশ ঘরের টিন মরিচা ধরে পরে যাওয়ায় লোহার স্ট্রাকচারগুলো কঙ্কালের মত দাড়িয়ে আছে। তার উপর গুল্মলতা আর বুনো ঝোপ ঝাড়ে ভরে গেছে।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এসব ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ঘর মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ফলে কয়েক বছর যেতে না-যেতেই ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি পড়তে শুরু করে। ঘরের মেঝেতে ফাটল ধরে। ফলে বেশির ভাগ ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নে বসবাস রত মুনছুরা বেগম বলেন, ‘ঘরের টিনের চাল সব ফুটা অইয়া গগ্যাছে।দেওই অইলে পানি পরে আর রৌদ অইলে ফুটা দিয়া ঘরের মধ্যে রৌদ ঢুইক্যা যায়। মোরা হেইয়ার লইগ্যা এহন এই ঘরে ঠিকমত থাকতে পারি না, ঘুমাইতে পারি না।’

তক্তাবুনিয়া অশ্রয়নে বসবাসরত সুলতানা  বেগম বলেন, ‘ঘরের অবস্থা এতই খারাপ স্যার মোরা এহন আর এই ঘরে থাকতে পারি না। চাল দিয়া দেওইর সময় খালি পানি পরে। হেইয়ার লইগ্যা নাহইল পাতা আর পলিথিন দিয়া এহন ঘরে থাকতে হয়।’

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া আশ্রয়নের সভাপতি সুলতান মৃধা বলেন, ‘আশ্রয়নের ঘড় এহন ছাড়া বাড়ী অইয়া গ্যাছে। ঘরের টিন লোহা খুডি সব নষ্ট অইয়া যাওয়ায় সব মানুষ ছাইর্যা চইল্যা গ্যাছে। মানুষ না থাহায় আশে পাশে ঝোপ জঙ্গল অইয়া ভইর‌্যা গ্যাছে।

আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি  মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন,‘নির্মানের পর আশ্রয়নের ঘর সংস্কার করা হয়নি। ঘরগুলো সংস্কারের অভাবে আশ্রয়নে বসবাসকারী পরিবারগুলো থাকতে পারছে না। এগুলো দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।’

আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো.মফিজুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কারের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়া গেলে এবং বরাদ্দ পাওয়া গেলে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন,ঘরগুলো সংস্কারের জন্য  সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জরুরী ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

 


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন