আমতলীর দিপালী রানীর জীবন সংগ্রাম ইটেরভাটায়
.jpg)
দিপালী রানী(৩২)এক সংগ্রামী নারীর নাম। বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী গ্রামের দিপালী রানীর সংসার চলে ইটভাটায় কাজ করে। অসহায় দারিদ্র দিপালী রানীর ৫ জনের সংসার। স্বামী শিপন শীল মানষিক ভারসাম্যহীন। তিন সন্তান ২ মেয়ে এক ছেলের সংসার।
বড় মেয়ে দিপ্তি(১৮), অনামিকা (১০) ও শান্ত শীল (১৪) এই ৫ জন নিয়ে দিপালী রানীর সংসার। স্বামীর জমিজমা বলতে ঘরের ভিটা ছাড়া আর কিছুই নাই। এই তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে ভাঙাচোরা অর্ধচালা ঘরে বসবাস করেন। সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। বাড়ীর পাশে ই রয়েছে একটি ইট ভাটা। ঐ ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ যে দিন করতে পারেন সে দিন দিপালীকে ইটভাটা থেকে ২০০ টাকা পারিশ্রমিক দেয়া হয়। তাও সপ্তাহে ৭ দিন ইটভাটায় কাজ হয়না । ২ দিন বা তিন দিন ইট ভাটায় কাজ থাকে। বাকী দিন গুলো মানুষের বাড়ীতে ঝি এর কাজ করে ছেলে মেয়ে ও স্বামীর মুখে খাবার তুলে দিতে হয়। যে দিন কাজ করতে পারেন সেদিন কোন রকম দু বেলা খাবার তুলে দিতে পারেন সন্তানের মুখে। কাজ যে দিন করতে পারেন না সে দিন অনাহারে থাকতে হয় পরিবারের সকলকে নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিপালী রানী বসবাসের অযোগ্য জরাজীর্ণ একটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করছেন। জানা যায়, উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের টিয়াখালী গ্রামের শিপন শীল (৩৬)। মানসিক রোগে ভুগছেন। তার কোন জমি জমা বলতে রয়েছে ২ শতাংশ বসতভিটা। এ ভিটাতে জরাজীর্ণ একটি ঘরে দুর্যোগ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে দিপালী পরিবারের। তবে জীবিকার তাগিদে ইটভাটায় ১৪ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস। আর দিপালীর এ পরিশ্রমেই চলছে সংসার। কাজ করেই কোনমতে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে। ইতোমধ্যে অন্যদের সাহায্যে সহযোগিতায় বড় মেয়ে দিপ্তিকে বিয়েও দিয়েছেন। ছোট মেয়ে অনামিকার বয়স ৭ । ছেলে শান্ত’র বয়স ১২ বছর। শান্ত পেটে ভাতে আমতলী শহরের একটি দোকানে কাজ করেন।
দারিদ্র্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে বেঁচে আছে দিপালীর পরিবার। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে একটু ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। কারণ, কখন যেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ উঠে, এমন আতঙ্কে নির্ঘুমে কেটে যায় সারাটি রাত।
সরকারের সুবিধা বঞ্চিত দিপালী বলেন, অভাব অনটনের কারণে ঠিকমতো অন্ন-বস্ত্র নেই। এমনকি ঘরের মধ্যে ভালোভাবে ঘুমাব, সেটাও পারি না। কখন জানি উপড়ে পড়ে ঘরটি। এ ভয়ে ঘুম আসে না চোখে। সরকার যদি একটা ঘর দিতো, তাহলে শেষ বয়সে একটু শান্তিতে ঘুমানো যেতো।
এলাকার বাসিন্দা মিন্টু জানান, জীবন-জীবিকার তাগিদে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় দিপালীকে। কিন্তু ভাঙা ঘরে ঢুকে বেড়ে যায় দুশ্চিন্তা। কালবৈশাখীর ভয়ে দুটি সন্তানকে নিয়ে ঘরে বসে রাত কাটাতে হচ্ছে।
ইটভাটার ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন হাং জানান, আমার দেখামতে দীর্ঘ ১৩/১৪ বছর ধরে দিপালী অভাবী সংসারের হাল ধরতে এখানে কাজ করে সামান্য রুজি রোজগার করে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, অনেকে সরকারি পাকা ঘর পাচ্ছেন। সরকারী ভাবে ঘর পেলে একটু শান্তিতে থাকতে পারবেন দীপালী।
আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা মুঠোফোনে বলেন, দিপালী রানী যাতে সরকারী ভাবে সহযোগিতা পান তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
আমতলীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, দিপালী রানীর বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমবি