ইভ্যালির সার্ভার সচল করতে ৬ কোটি টাকা চায় অ্যামাজন
ইভ্যালির ওয়েবসাইটের সার্ভার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে অ্যামাজন। বন্ধ থাকা সেই সার্ভার সচল করতে অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে আদালতের নির্দেশনায় গঠিত ইভ্যালি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বোর্ড।
ইভ্যালির বন্ধ সার্ভার সচল করতে অ্যামাজন দাবি করেছে ৬ কোটি টাকা। এ তথ্য জানিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে ধানমন্ডি ইভ্যালির কার্যালয়ের দুটি লকার ভাঙার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এটা নিয়ে অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ ও দর কষাকষি চলছে। সার্ভার চালু না হলে অডিট করাও সম্ভব না। জানা সম্ভব না ঠিক কী পরিমাণ গ্রাহকের পণ্য ও টাকা আটকা রয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ইভ্যালির সার্ভার বন্ধ। এটি পরিচালনা করত অ্যামাজন। আমরা অ্যামাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি ইভ্যালির সার্ভার চালু করার জন্য। কিন্তু তারা ৬ কোটি টাকা দাবি করেছে। তারা বলেছে, ইভ্যালির কাছ থেকে তারা ৬ কোটি টাকা পায়। সেই টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তারা ইভ্যালির সার্ভার চালু করবে না। আমরা গত তিনমাস ধরে চেষ্টা করে আসছি অ্যামাজনের মাধ্যমেই ইভ্যালির সার্ভারটি চালু করা যায় কি না।
এ সময় বোর্ড সদস্য অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, সম্প্রতি অ্যামাজন যোগাযোগে সাড়া দিয়েছে। আমরা আইনগত দিকটি বুঝিয়ে সার্ভারের একসেস চেয়েছি। তবে তারা বোর্ডের সত্যতা ইউএস অ্যাম্বাসির মাধ্যমে নিশ্চিত করে জানাতে বলেছেন। তারপর ইউএস অ্যাম্বাসি সার্টিফাই করলে তারা সেটি দেখবেন। তখন আমরা সিঙ্গাপুরের অ্যামাজনে যোগাযোগ করতে পারব। এটা ভালো খবর।
বোর্ড চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এই সার্ভার ছাড়া অডিট সম্ভব না। কারণ সার্ভারেই রয়েছে কত গ্রাহক, কত লেনেদন, গেটওয়ে’তে কত টাকা আটকে আছে। এখন সার্ভার ওপেন করা অপরিহার্য। কিন্তু ৬ কোটি টাকা তো দেওয়া অসম্ভব।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, নগদ, রকেট ও বিকাশসহ পাঁচটি ব্যাংকের গেটওয়ে’তে আটকে আছে ২৬ কোটি টাকা। সেই টাকার উত্তোলেন প্রসেসের জন্য হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছে। সেই টাকা তুলতে আমাদের হাইকোর্টের নির্দেশনা লাগবে। অনেক প্রসেস আছে। হাইকোর্টের আদেশ ছাড়া আমরা কোকাকোলার বোতলও গ্রাহককে হস্তান্তর করতে পারব না। তবে রকেটের ৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা রেডি। হাইকোর্টের নির্দেশনা পেলে আমরা রিফান্ড করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সম্পদের সঙ্গে দেনার সামঞ্জস্য করতে হচ্ছে। টাকার বাইরে ল্যাপটপ-ফ্রিজসহ নানা পণ্য গোডাউনে আটকা। সেগুলোর গ্রাহকদের তালিকা পেতেও আমাদের সার্ভার ওপেন করা অপরিহার্য।
সাবেক বিচারপতি বলেন, ইভ্যালির ২৪টি গাড়ির সন্ধান পেয়েছি। এর মধ্যে ১৬টি গাড়ি হাতে পেয়েছি। এর মধ্যে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি এমডি-চেয়ারম্যান ব্যবহার করতেন। আমরা ৬টি গাড়ি নিলামে বিক্রি করব। সেজন্য নিলাম কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগও হয়েছে। বাকিগুলো ভাড়ায় চালানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, যাতে কিছু টাকাও পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, রাসেল ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে কত টাকা রয়েছে এবং কত সম্পদ রয়েছে, সেটা জানতে হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়েছি। টাকার পরিমাণ জানাতে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকে বলেছেন। এই তথ্যগুলো পেলে বোঝা যাবে ইভ্যালির টাকা ও সম্পদ কতো রয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি রেজাউল আহসান, আইনজীবি ব্যারিস্টার খান মো. শামীম আজিজ, অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, এফসিএ অ্যান্ড এফসিএমএ’র সাবেক চিপ চার্টার্ট অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসফিয়া সিরাত।
এর আগে ইভ্যালির ধানমন্ডি অফিসের দুটি লকারের পাসওয়ার্ড না পেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভাঙা হয়েছে। সেই দুটি লকার ভাঙার পর দেখা যায়, দুই লকার মিলিয়ে দেড় শতাধিক বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই। প্রথম লকারে মেলেনি কোনো টাকা। আর দ্বিতীয় লকারে পাওয়া গেছে মাত্র ২ হাজার ৫৩০ টাকা।
এসএম