আমতলীসহ উপকূল থেকে কমে যাচ্ছে পেঁচা

বরগুনার আমতলীসহ দক্ষিনাঞ্চলে পেঁচা দেখা যেতো এখন আর তেমন দেখা যায় না। দিন দিন পেঁচার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কীট-পতঙ্গ, সাপ, ব্যাঙ পেঁচার খাদ্য। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। পেঁচা পাখিদের দলের হলেও এরা অন্যান্য পাখিদের সাথে একত্রে থাকে না। এরা একাকী। নির্জনে বাস করে। এরা নিশাচর।
বাংলাদেশে পেঁচা চেনে না এমন মানুষের সংখ্যা কম। তবে শহরের মানুষ পেঁচার ডাকের সাথে তেমন সম্পৃক্ত নয় বললেই চলে। পেঁচাকে অনেকে কুসংস্কারবশত অশুভ পাখি মনে করে থাকে। বস্তুত পেঁচা একটি অতি উপকারী পাখি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পেঁচার ভূমিকা অতুলনীয়। এদের দিনের আলোতে খুব একটা বেশী দেখা যায় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উঁচু মগডালে বা ঘনপাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। নিশাচর পাখি হওয়ায় শিকারের জন্য রাতের বেলায় ঘুড়ে কয়েক প্রজাতির পেঁচা চোখে পড়তো ।
এদের মধ্যে হুতুম পেঁচা, লক্ষ্মী পেঁচা, নিমখোর পেঁচা, ভুতুম পেঁচা ইত্যাদি। পেঁচা নির্জন স্থানে থাকতে ভালবাসে। লক্ষ্মী পেঁচা ছাড়া অন্য প্রজাতির পেঁচা লোকারণ্যে দেখা যায় না। কৃষি প্রধান এলাকায় বসবাস করে থাকে লক্ষ্মী পেঁচা। কৃষকের মাঠের ফসল নষ্টকারী ইঁদুর ভক্ষণ করে অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে বালাই ব্যবস্থাপনা করে থাকে এই লক্ষ্মী পেঁচা। লক্ষ্মী পেঁচা সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষের পিঠের উপর বসে শিকার ধরতে দেখা যায়।
হুতুম পেঁচা ও ভুতুম পেঁচা দেখতে প্রায় একই রকম। শুধু গায়ের রঙের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এরা সাধারণত রাতের আধারে বিচরণ করে থাকে।
পেঁচার প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত । একটি স্ত্রী পেঁচা ২ থেকে ৫টি ডিম দিয়ে থাকে। ডিমের রং গোলাকৃতি, সাদা। আর ১২ থেকে ১৪ দিন ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফোটে। এরা মরা বাঁশ বা গাছের মাথায় বসতে পছন্দ করে। আর দিনের বেলায় এরা গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। এরা মানুষের কোন ক্ষতি করে না। বরং ফসল নষ্টকারী প্রাণী, ইঁদুরসহ অন্যান্য প্রাণী শিকার করে থাকে। এছাড়া সাপ, ব্যাঙ ও কীট-পতঙ্গ শিকার করে। পেঁচার দৃষ্টিশক্তি ও শ্রাবণশক্তি খুবই প্রখর। এদের দৃষ্টি যেন দূরবিনের মত। রাতের অন্ধকারে দূরের জিনিষ দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখতে পায়। তবে মনে রাখতে হবে পেঁচা কাছের জিনিষ ভালমত দেখতে পায় না। কিন্তু শত্রুর আগমনের আগেই তারা টের পেয়ে যায়। আর মানুষের দৃষ্টিশক্তির থেকে এদের দৃষ্টিশক্তি অনেক বেশী। পেঁচার চওড়া মাথা। পেঁচার চোখ অন্যান্য পাখির মতো মাথার পাশে বসান থাকে না। এদের চোখ আনেকটা মানুষের মতো সামনের দিকে। মাথা ঘুড়াতে পারে প্রায় ২৭০ ডিগ্রি কোণে। এই কারণেই পেঁচা দু’চোখ মেলে তাকালে অনেকে ভয় পায়।
আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা: আবু সাঈদ বলেন, ফসলের জমিতে পোকা-মাকড় মারার জন্য অতিরিক্ত বিষ ব্যবহারের ফলে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি নানা প্রতিকূলতায় দিন দিন পেঁচা হারিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন আমাদের দেশে পেঁচার সংখ্যা কমছে। প্রাকৃতিকভাবে বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য পেঁচার জুড়ি নাই। এদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদেরই কর্তব্য।
এইচকেআর