ভোলায় প্রতিদিনই নিধন হচ্ছে কোটি কোটি মাছের পোনা


ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা ধ্বংসকারী অবৈধ জাল উচ্ছেদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে মৎস্য বিভাগের বিশেষ চিরুনি অভিযান। আমাবশ্যা এবং পূর্ণিমার ওপর ভিত্তি করে ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ৪ ধাপের এই অভিযান শেষ হচ্ছে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। এর অংশ হিসাবে ভোলার মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীতে পুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জাল ব্যবহারকারীদের জেল-জরিমানা দেয়া হচ্ছে। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অবৈধ জাল, জব্দ করা হচ্ছে মাছ ও মাছ ধরার ট্রলার। কিন্তু কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ জালের ব্যবহার। এ সময়ে এভাবে অবৈধ জালে কোটি কোটি মাছের পোনা ধ্বংস হলে মৌসূমে মাছের আকাল হবে বলে মনে করছেন সাধারণ জেলেরা। অবৈধ জাল ব্যবহার কারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস মৎস্য বিভাগের।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস সাধারণত নদ-নদীতে বড় মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। আমাবশ্যা ও পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে দু-একটা বড় মাছের দেখা মিললেও নদীতে ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনার আধিক্যই থাকে বেশি। এ সময় অসাধু জেলেরা নদীতে বিশেষ করে ডুবোচর এলাকায় অবৈধ পাইজাল, বেড় জাল, খুটি জাল, মশারির জাল এবং বেহুন্দি জালসহ নানা ধরনের অবৈধ জাল পেতে মাছ শিকার করে। এসব জালে যতটা না বড় মাছ ধরা পড়ে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আটকা পড়ে নষ্ট হয়ে যায় বাচ্চা ইলিশ এবং পোয়া, তাপসি, আইড় ও বোয়ালসহ বিভিন্ন মাছের ছোট ছোট পোনা। অকালে এভাবে এসব অবৈধ জালে মাছের পোনা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মৌসূমে মাছের আকাল দেখা দেয়। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। মাছের উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য পোনা মাছ গুলো বেড়ে ওঠার এই সময়টাতে মৎস্য বিভাগ অবৈধ জাল উচ্ছেদে প্রতি বছরই চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে।
৩০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ৪টি ধাপে ২ শত ৫২ টি অভিযানে ৮২ টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ শত ১২ জেলেকে আটক করেছে। জরিমানা আদায় করেছে ৬ লাখ টাকা, মামলা করেছে ৯৬ টি। এছাড়া ৩ শত ৪০ টি বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল, ১১ টি মাছ ধরার ট্রলার ও ১৩ মেট্রিকটন জাটকা মাছ জব্দ করেছে। প্রতিদিনই নদীতে নামছে অভিযান পরিচালনাকারী দল কিন্তু এত কিছুর পরও থেমে নেই ছোট ছোট পোনা ধ্বংসকারী অবৈধ জালের ব্যবহার। সাধারণ জেলে এবং মৎস্যজীবি সমিতির নেতাদের দাবি, চিরুনি অভিযানের মধ্যেও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা অবৈধ জাল দিয়ে কোটি কোটি পোনা ধ্বংস করছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের নির্মূল করতে পারছে না।
নাছির মাঝি ঘাটের জেলে মো. শরিফ বলেন, প্রশাসন অভিযান করে ঠিকই কিন্তু বাধা জাল, বেড় জাল, খুটি জাল, মশারির জাল, বেহুন্দি এগুলা না ধইরা আমাদের মতো ছোট জেলেদের কে ধরে। ঐগুলা তো ক্ষমতাসীন জেলেদের তাই ধরতে পারে না।
ভোলার কাজিরহাট ঘাটের জেলে মো. খোকন বলেন, নদীতে অবৈধ যে সমস্ত জাল আছে এগুলা দিয়ে মাছের রেনু পোনা থেকে শুরু করে সব ধ্বংস করে। তাদেরকে কিছু বলতে পারে না কারণ তারা এম পি মন্ত্রীদের কাছের লোক। তাই তাদের ক্ষমতা অনেক বেশি। আর এ সমস্ত কারণে মাছ বড় হতে পারেনা। মৌসুমের সময় মাছ থাকে না এবং আমরা পাইও না।
মৎস্যজীবী সমিতির নেতা মো. এরশাদ বলেন, সরকার যে সমস্ত অভিযান দেয় অভিযানগুলো যদি ২৪ ঘন্টা ঠিক টাইম মতো পরিচালনা করে তাহলে ছোট মাছ অনেকটা রক্ষা পেত। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যখন নদী থেকে চলে যায় তখনই অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা শুরু করে জেলেরা। ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত সর্ব জায়গাতেই এই অবৈধ জাল আছে। সরকারের কাছে আমার দাবি এই অবৈধ সকল জালগুলো উচ্ছেদ করা হোউক।
জেলেরা বলছে, মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন দায়সারাভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের নামে তারা চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাঘববোয়ালদের কিছুই করতে পারছে না।
তবে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম জানান, যেসব জেলেরা তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ জাল ব্যবহার করছে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভোলায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন ইলিশসহ ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এইচকেআর
