নৌ-ফায়ার স্টেশন নেই, কয়েক বছরে পুড়েছে কোটি টাকার সম্পদ

পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার সন্ধ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে গড়ে ওঠা বিসিক শিল্পনগর ও দুটি বৃহৎ বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা অগ্নি দুর্ঘটনার হুমকির মুখে রয়েছে। অথচ সেখানে নেই কোনো নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টশন বা অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। এতে প্রায়ই আগুন লাগছে, ভস্মীভূত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা। স্বরূপকাঠি নামেই বলেই সবাই এক নামে চিনে থাকেন।
এই উপজেলাকে বিশাল সন্ধ্যা নদী প্রাকৃতিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করেছে। যেমন- ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে নদীর পূর্ব পাড়ে উপজেলা সদর এবং নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে ৬টি ইউনিয়ন। ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে ইন্দেরহাট ও মিয়ারহাট বন্দরের পরিচিতি রয়েছে দেশব্যাপী। ইন্দেরহাট, মিয়ারহাটে গড়ে উঠেছে দুটি বড় বন্দর। সেই সাথে রয়েছে ১৯৬১ সালের পুরনো বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিক শিল্প নগরী। এ ছাড়াও ডুবি, আলকিরহাট, করফা, দৈহারী, গনকপাড়া, চিলতলা বাজারসহ আরো ৭/৮টি ছোট-বড় বাজার রয়েছে। স্কুল-কলেজসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এ পাড়ে। আগুনের হাত থেকে এ সব স্থাপনা রক্ষার্থে নেই নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টেশন বা অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা।
বিসিকের ব্যবসায়ী মো. জসিম হাওলাদার ও কবির খান জানান, সন্ধ্যার পশ্চিম পাড়ে যেকোনো স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটলেই পূর্ব পাড় থেকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা পার হয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গত বছরের মাঝামাঝিতে আগুন লেগে কৌরিখাড়া বিসিক শিল্প নগরীর শারমিন রোপ ফ্যাক্টরি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তাতে প্রায় ৩ কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়াও কয়েক মাস আগেও নগরীর রয়েল ফার্নিচার কারখানা পুড়ে যায়। এখন সবসময় আগুন আতঙ্কের মধ্যে থাকেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। তাই জরুরিভাবে নৌ-ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবি বিসিক শিল্প নগরীর ব্যবসায়ীদের। শিল্প নগরীর শারমিন রোপ ফ্যাক্টরির মালিক মো. শাহ আলম বলেন, আমার ফ্যাক্টরিতে যখন আগুন লাগে তখন সবাই বালতি, গামলা দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। আজ আমি শেষ, প্রায় পথে। ফায়ার স্টেশনের লোকজন আসছে অনেক পরে। আমার যা ক্ষতি হয়েছে তা আর ফিরে পাবো না। তখন যদি এখানে ফায়ার স্টেশন থাকতো তাহলে আমার এতো বেশি ক্ষতি হতো না। স্থানীয় সামাজিক আন্দোলনের নেতা মিঠুন হালদার জানান, ইন্দেরহাট-মিয়ারহাট এই দুই বিসিক শিল্প নগরীসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার্থে নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন এখন সময়ের দাবি। আমরা অনেক বার দেখেছি একটু আগুন কোনভাবে লাগলেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো নগরীতে।
যদি নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকতো তাহলে ক্ষতিটা অনেকগুণ কম হতো। আর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিকের ম্যানেজার মো. শাহিদুর রহমান বলেন, গত ১ বছরের মধ্যে বিসিক শিল্প নগরীতে ৮-৯ ছোট বড় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে যার ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।
নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন হলে এ ক্ষতিটা কমে আসবে এবং সরকারও ভালো রাজস্ব পাবে। এদিকে, পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ, ম রেজাউল করিম জানান, অতিদ্রুত আমার নির্বাচনী এলাকা স্বরুপকাঠিতে একটি নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে জানানো হয়েছে। আগুনের হাত থেকে বন্দরসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার্থে নদীর পশ্চিম পাড়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস বা নৌ-ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা
এইচকেআর