এমপি রিমনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ

বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন গত রোববার পাথরঘাটা থানায় এমপি রিমনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ করেছেন। দেলোয়ার হোসেন পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের পূর্ব লেমুয়া গ্রামে মৃত ইসাহাক আলী মুসুল্লীর ছেলে। সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বাড়িও একই ইউনিয়নে। দেলোয়ার হোসেনের দাবি, কাকচিড়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ম এলাকায় তাদের পৈত্রিক ক্রয়সূত্রে রেকর্ডীয় জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন এমপি রিমন। এছাড়াও কাকচিড়া খাদ্যগুদামের চলাচলের পথ বন্ধ করে সেটিও দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন খাদ্য বিভাগের জমিদাতারা।
পাথরঘাটা থানায় করা লিখিত অভিযোগে বেলায়েত হোসেন উল্লেখ করেন, তফসিল বর্ণিত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া মৌজার জেএল নং-০৪, এসএ খতিয়ান নং- ৫৪০/১১৬১ দাগ নং- ৩১৭০ এর ৩.৫০ শতাংশ জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে বন্টন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় সম্প্রতি জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেও আদেশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। কিন্ত আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার অনুসারী কাকচিড়ার বাসিন্দা মাহবুব দালাল ওই জমি দখলে নিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করে। তিনি এতে বাঁধা দেয়ার পর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার কথা হয়।
কিন্ত গত রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) দুপুর একটার দিকে তিনি তার জমিতে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে সাংসদ রিমন ও মাহবুব দালাল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। এসময় তিনি কাজ করতে নিষেধ করলে সাংসদের অনুসারি মাহবুব দালাল হুমকি ধামকি দিয়ে তাকে ওই স্থান ত্যাগ করতে বলেন।
বেলায়েত জানান, ওই মৌজার এসএ ৫৪০ খতিয়ানের ৩১৭০ দাগে মোট ১৩ শতাংশ জমির এসএ রেকর্ডিও মালিক মোট ১০জন। এর মধ্যে চারজনের ৩.৫০ শতাংশ জমি আনোয়ার গংদের কেনা। বাকি জমির মধ্যে জালাল আহমেদ শিকদার ও আবু জাফর ৭.২৫ শতাংশের জমির মালিক। তারা জমি বিক্রি করেননি। এমপি রিমন কেতাব আলী গংদের .৭৫ এক শতাংশ ও ইসমাইল গংয়ের ওয়ারিশদের .৬৫ জমির কিনেছেন। অথচ, তিনি দাগের ৭ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বেলায়েত হোসেন জানান, তিনি পাথরঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পাঠিয়ে ওই কাজ বন্ধ করার অনুরোধ করেছেন। গতকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখলেও দুপুরে মাহবুবব দালাল ফোন করে বেলায়েত হোসেনকে বলেছেন, ‘ এমপি সাথে টক্কর দিয়ে জমি খাবা, দেকপা আনে তোমারে জমি কেডা খাওয়ায়, তোমার কাগজপত্র থাকলে ঢাকায় গিয়া এমপির লগে কতা কও মিয়া’। বেলায়েত বলেন, ২০০২ সালে জমির শরীকদের মধ্যে বন্টন নিয়ে আরএস ৩৭৪ খতিয়ানের এসএ চারটি ৫৪০, ১১৬১, ২০৪ ও ৭১৫ এই চারটি খতিয়ানের মোট ৩১৬৯, ৩১৭০, ৩১৭৭, ৩১৭৯ (৩৫৪৮ বাটা দাগ) বিরোধীয় এই পাঁচটি দাগের নিয়ে বন্টন মামলা চালু হয়। আইনজীবীর বাবা মারা যাওয়ায় মামলাটির পরিচালনা ব্যাঘাত ঘটে। ২০০৮ সালে পুনরায় মামলা চালু করলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালত জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করে আদেশ দেন।
বেলায়েত বলেন, ১৪ বছর ধরে বন্টন মামলা চালাইয়া মুই নিঃস্ব হয়ে গেছি মামলায়। মোর হেই জমি এখন এমপিসাব দখল কইর্যা বিল্ডিং গাততেছে। তিনদিন ধইর্যা তারে (এমপিরে) ফোন দিতেছি, ফোন না ধইর্যা ব্লক লিষ্ট কইর্যা রাকছে। লাগলে মুই অই জমিতেই মইর্যা যামু, তোমো (তবুও) মোর জাগা ছাড়মু না।
জমি দখলও হুমকি দেয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব দালাল বলেন, আমি যতটুকু জানি ওই দাগ থেকে এমপি মহোদয় ৭ শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখান থেকে তার ৫ শতাংশ জমি দখলে আছে। দখলীয় জমিতেই তিনি কাজ করছেন। ওনাকে হুমকি দেয়ার প্রশ্ন আসেনা। তিনি যদি কাগজপত্রে জমি পান তবে সেটা অন্য কেউ নিতে পারবেনা।
তবে সাংসদ রিমনও দাবি করছেন, যে জমিতে কাজ করছেন, ওই জমির ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি। ৩১৭০নং দাগে মোট ১৩ শতক জমির আমি ৭ শতাংশ জমি রেকর্ডিয় মালিকের ওয়ারিশদেও কাছ থেকে কিনেছি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ওই জমি আমার দখলে। এখন আমি সেই জমিতে আমি কাজ করছি। একই দাগে বেলায়েত হোসেনের দাবিকৃত জমি ৩.৫০ শতাংশ। আমি তাকে (বেলায়েত হোসেনকে) বলেছি কাগজপত্র নিয়ে আসেন। কিন্ত তিনি আসেননি। এখানে যদি বেলায়েতের জামি থাকে তবে আমি তাকে বুঝিয়ে দেব।
এইচকেআর