ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news

ইউএনওর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ

ইউএনওর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

প্রতিটি উপজেলা থেকে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য “বীর নিবাস” নামে গৃহ নির্মাণের তালিকা চেয়েছেন সরকার। ওই তালিকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়। তালিকায় নাম দিতে প্রতিটি অচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি ২০ হাজার করে টাকা ঘুষ দাবী করেছেন বলে দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের। দাবীকৃত টাকা না পাওয়ায় বীর নিবাসের তালিকা সরকারের কাছে না পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। এছাড়াও নানা অভিযোগ তুলে ইউএনওকে বয়কটের ঘোষণা দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল।

আজ মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) জেলা প্রশাসকের কাছে এমন অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তালতলী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম আলী হাওলাদার।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যয় তালতলী উপজেলা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের “বীর নিবাস” তৈরির জন্য (দ্বিতীয় পর্যায়) তালিকার চাহিদা চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন বরাবরে চিঠি দেয়। ওই চিঠির আলোকে জেলা প্রশাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারের ঘরের তালিকা তৈরী করে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু চিঠি পেয়েই ইউএনও তালিকা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। ইউএনও দাবীকৃত ঘুষ দিতে রাজি হয়নি মুক্তিযোদ্ধারা। এ কারনে গত ৩০ জানুয়ারী বীর নিবাসের তালিকা তৈরীতে সভা ডেকে অজ্ঞাত কারনে তিনি ওই সভা মুলতবি করেন।

ঘুষের টাকা না পেয়ে ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসের ঘরের তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠায়নি বলে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোসলেম আলী হাওলাদার। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানী, ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবন সাজসজ্জা না করে ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানা  অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের কারনে গত সোমবার উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন তারা।

তালতলী উপজেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজিজ আকন, ছাত্তার ফরাজী, হরিপদ সরকারসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা ওই সকল অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপক্ষের কেউ না। তিনি তালতলীর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটুক্তি করে থাকেন। সবাইকেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে প্রায়ই অসম্মান করে থাকেন।  জাতীয় কোন দিবসে আমাদের নুন্নতম সম্মানটুকু তিনি দেন না। আমাদের বীর নিবাসের ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমরা দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ইউএনও’র বিচার দাবী করছি।

তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোঃ মোসলেম আলী হাওলাদার মুঠোফোনে বলেন, তালতলীর মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও কাছে অসম্মানের পাত্রে পরিণত হয়েছে। ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের অহরহ হয়রানী, ব্যঙ্গ ও বিদ্রুপ করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবনে সাজসজ্জা না করেই ২০ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া আমাদের “বীর নিবাস” ঘরের তালিকা করতে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইউ্ওনও এমন আচারনের সুরহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার সকল কার্যক্রম বয়কট করেছি। এবিষয়ে আজ আমি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, ইউএনও তালতলীতে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পরেছেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে আসছেন।

তালতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের কথা অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, ডিপিপিতে তালতলী উপজেলায় বীর নিবাসের ঘরের কোন বরাদ্দ নেই। তাই তিনি তালিকা করেননি। তিনি আরও বলেন, ১০ জন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিতে আমার কাছে আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমি ওই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমি এখনো কোনো অভিযোগ হাতে পাইনি। পেলে পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন