ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news

ইটভাটার ট্রাক-ট্রলিতে বেহাল কোটি টাকার সড়ক!

ইটভাটার ট্রাক-ট্রলিতে বেহাল কোটি টাকার সড়ক!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার আমতলী উপজেলায় নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে যেখানে-সেখানে গড়ে উঠেছে বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মাটি ও ইট বোঝাই করে ট্রাক পরিবহনের কারণে বেহাল হয়ে পড়ছে উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ কাঁচা ও পাকা সড়ক। চলতি মৌসুমে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় বছরজুড়ে ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলি চলাচলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে বিপজ্জনক সড়কে পরিণত হয়।


উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিন ক্যাটাগরিতে আমতলী উপজেলায় প্রায় ২২৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সড়ক ৭৫ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক ১৫০ কিলোমিটার, ক ও খ শ্রেণির গ্রামীণ সড়ক রয়েছে ৪৫০ কিলোমিটার। এ ছাড়া আমতলী উপজেলায় কাঁচা রাস্তা রয়েছে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার।

সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে হাজার টাকা বাঁধ হয়ে কুকুয়া হাট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারের একটি পাকা (কার্পেটিং) গ্রামীণ সড়ক রয়েছে। এই সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে পাঁচটি ইটভাটা। ওই গ্রামীণ পাকা সড়কে ১০ টনের অধিক ওজনের মালবাহী ট্রাক ও ট্রলি চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও ইটভাটায় ১৫ থেকে ২০ টনের অধিক ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে প্রতিদিন ইটভাটাগুলোতে মাটি এবং ইট পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে সম্পূর্ণ খানাখন্দ তৈরি হয়ে ভারী ও হালকা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী-গুলিশাখালী এবং মহিষকাটা-গোজখালী সড়কে প্রতিদিন ভারী ট্রাক ও ট্রলি বোঝাই করে ইটভাটাগুলোতে মাটি ও ইট বহন করায় বর্তমানে সড়ক দুটি বেহাল দশায় পরিণত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক দুটি শুষ্ক মৌসুমে ধুলোময় ও বর্ষার মৌসুমে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে।

আমতলী এ কে স্কুল ও তালুকদারবাজার ভায়া হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সড়কটি দুই পাশে তিনটি ইটভাটা রয়েছে। সড়কটি দিয়ে সব ইটভাটায় ট্রাক ও ট্রলি দিয়ে অধিক পরিমাণে ইট ও মাটি পরিবহন করায় সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে এখন যান চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার খুড়িয়ার খেয়াঘাট-নোমরহাট সড়ক, খুড়িয়ার খেয়াঘাট-তারিকাটা, কলংক-সোনাউঠা, ঘটখালী-তালুকদার বাজার, গাজীপুর বন্দর-তালুকদার বাজার, কেওয়াবুনিয়া-রায়বালা, পৌরসভার বটতলা-চাওড়া কাউনিয়া, ছুড়িকাটা-মহিষডাঙ্গা, গোজখালী-গুলিশাখালী, কুকুয়াহাট-সুবন্ধি, গোপখালী-পচাকোড়ালিয়া স্লুইজগেটসহ, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচা ও পাকা সড়কগুলো ধ্বংসের পথে।

বর্তমানে উপজেলার প্রায় প্রতিটি সড়ক দিয়ে ইটভাটার ভারী ট্রাক ও ট্রলিগুলো চলাচল করায় প্রতিটি সড়কেই ছোট-বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে এবং সড়কে থাকা পুরনো সেতুগুলোও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই সেতু ও সড়ক দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে ও যেতে হচ্ছে। একই সঙ্গে পাকা সড়কের পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তারও।

উপজেলা প্রশাসনের থেকে উপজেলার সর্বত্র মাইকিং করে এবং প্রভাবশালী ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে না পারায় গ্রামীণ কাঁচা ও পাকা সড়কগুলো দিয়ে চলাচলরত ইটভাটার ভারী ট্রাক ও ট্রলিগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না।

হাজারটাকা বাঁধ এলাকার ভ্যানচালক মো. খালেক মিয়া জানান, পাকা সড়ক কইরা লাভ কী? ইটভাটার মাটি ও ইট টানার কারণে ট্রাক ও ট্রলিতে সড়কটা শেষ কইরা দিছে। ধুলায় আর ভাঙার কারণে মোরা ভ্যানে মালামাল পরিবহন করতে পারি না।

খুড়িয়ার খেয়াঘাট সড়কের মাহেন্দ্রাচালক খবির মিয়া বলেন, ইটভাটার ট্রাকে মাটি ও ইট টানার কারণে ট্রাকের চাকায় সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক দিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

গুলিশাখালী বাজারের ব্যবসায়ী কামাল সওদাগর বলেন, ইটভাটার ট্রাক ও ট্রলিতে অত্র ইউনিয়নের সব কাঁচা ও পাকা রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে অবস্থা বেহাল।  সামনে বর্ষা মৌসুমে সব রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকবে না।

উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কেউ কারো কথা শোনে না। সড়কে স্টিলের ব্যারিকেড তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করা হলে গ্রামীণ সড়ক টেকানো যাবে না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ মুঠোফোনে বলেন, গ্রামীণ সড়কে বেপরোয়া যানবাহন চালানো বন্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন