ভান্ডারিয়ায় সৌদি রক মেলন তরমুজ চাষে সফলতা

আমন ধান ওঠার পরই শুরু কৃষক আবু বকরের রক মেলন নামের তরমুজ চাষের প্রক্রিয়া। যা এখন ব্যপক সাড়া ফেলেছে তার এলাকায়। ভান্ডারিয়া উপজেলার ৭নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক আব্দুল ওহাব হাওলাদারের বড় ছেলে। প্রায় ৩০বছর পূর্বে বাবার সাথে কৃষি কাজে সহায়তা করার মধ্য দিয়ে কৃষিতে কাজের আগ্রহ সৃষ্টি তার।
সরেজমিনে আবুবকরের কৃষিক্ষেতে আলাপকালে তিনি জানান, এসএসসি পাসের পর দারিদ্রতার কারনে লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে চিটাগং একটি গার্মেন্টসএ চাকুরী নিয়ে কিছু দিন কাজ করার পরে শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে গ্রামে ফিরে হতাশ হয়ে পরেন সে। এসময় বন্ধুদের পরামর্শে ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুল হক জোমাদ্দারের সাথে দেখা করে বিস্তারিত জানান। মনি জোমাদ্দার তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নিকট তাকে নিয়ে আসলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আই পরীক্ষার ফরন পুরণের টাকা দেন।
’৯২সে পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে,’৯৪বিয়ে পাস করেন। ’৯৫তে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় চাকুরী হয় তার। তবে লেখা পড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ চালিয়ে আসছেন আবুবকর। প্রথম অন্যের ১০কাঠা জমিতে বর্গা চাষী হিসেবে বিভিন্ন মৌসুমি সবজি উৎপাদনে সফলও হয়। পরের বছর নিজেই এক একর জমিতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়ে কৃষি কাজ চলিয়ে যান। কৃষিতে ভালো অবদান রাখায় উপজেলা,জেলা,বিভাগ ছাড়াও ২০১৭সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক লাভ করেন সে।
এসময় তিনি আরো জানান, আল্লাহ্র রহমতে এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্যারের বিশেষ সহায়তায় আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সব সময়ই আমি কৃষিতে নতুন সংযোজনের চেষ্টা করি। যেমন ২০১৯সালে সাবেক এমপি তাসমিমা হোসেন এর সহায়তায় এ অঞ্চলে প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেরি ও স্থানীয় তরমুজ চাষে সফল হয়েছি। মালচিং পদ্ধতিতেই এবছর সৌদি প্রবাসীর রক মেলন (ঐদেশের ভাষায় সাম্মাম) এবং হলুদ প্রজাতির ১১শ চারা রোপন করি। মাঠ তৈরী,চারা রোপন এবং ফলন পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫১/৫২হাজার টাকা। নিজের পরিবার,আত্মীয়স্বজনদের ২/১টা দেয়ার পরে যা বিক্রী হবে তাতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হবে। বর্তমানে তার কৃষি ক্ষেতে তরমুজ ছাড়াও স্টিকলেস (ঝাকা ছাড়া) উন্নত জাতের বরবটি, করলা, চিচিংগা, সশা, ঢেরশ,পুঁই শাক সহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজি দেখা গেছে।
এদিকে এ অঞ্চলে নতুন প্রজাতির তরমুজের ভালো ফলন দেখতে প্রতিদিন ই মানুষ ভিড় জমায়। অন্যদিকে আবুবকরের এই কৃষি কাজে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় বেকার যুবক মো. জসিম হাওলাদার, নান্টু পাহলান জানান, আমরা এতদিন চাকুরীর পিছনে ছোটাছুটি করে ব্যর্থ হয়ে কৃষি কাজ শুরু করে বর্তমানে ভালো আছি। আবুববকর শুধু একজন কৃষক ই না উনি আমাদের বা যারা কৃষি বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসে তাদের মৌখিক ছাড়াও ক্ষেতে গিয়ে হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়ে আসেন।
২০১৯ এবং ২০২১সালে বাংলাদেশ বেতারে আবুবকরের কৃষি বিষয়ক সাক্ষাৎকার ও শুনেছি আমরা। শিক্ষকতার পাশা পাশি কৃষি কাজ করে আবুববকরের বড় মেয়ে বিয়ে পাস করেছে,মেঝ মেয়ে বিয়ে পড়ে এবং ছোট ছেলে এবছর ১০ম শ্রেণিতে পরে। বাবার ধার দেনা পরিশোধের পরও সে নিজেও কিছু জমি করতে সক্ষম হয়েছে। আবু বকর আমাদের এলাকায় এখন একজন প্রতিষ্ঠিত কৃষি বান্ধন পরামর্শক। বর্তমান রক মেলন ও হলুদ প্রজাতির ৫০০পিচ তরমুজ যা কেজি হিসেবে প্রায় ১২শ কেজি হবে তা ঢাকায় নেয়ার জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছে সে। স্থানীয় বাজার রেখে কেন ঢাকায় ? এ প্রশ্নের জবাবে আবু বকর বলেন, এটা অত্যন্ত মূল্যবান এবং সুস্বাদু এর চাহিদা এখানে কম তাই ঢাকায় পাইকারদের সাথে কথা হয়েছে আগামীদিন (বুধবার) ইন্নশাল্লাহ্ নিয়ে যাব।
অন্যদিকে উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,আবুববকর সব সময়ই কৃষিতে নতুন একটা চমক আনে যানি। যখন শুনলাম এবছর ভিন্ন মাত্রার বিদেশী প্রজাতীর রক মেলন এবং হলুদ প্রজাতীর তরমুজ চাষ করেছে। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে তার তরমুজ ক্ষেত দেখে মন জুড়িয়ে যায়। কারন প্রায় ৩একর জমিতে তরমুজ ছাড়াও বহু উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমি সবজি দেখে অভিভুত হই। ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, আববকর শুধু একজন সফল কৃষক ই নয় সে তার এলাকার বহু কৃষককে বিভিন্ন সময়ে কৃষি সম্প্রসারন বিষয়ে অবহিত করণ করে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানলাম আবুবকরের দেখা দেখি ঐ এলাকার বহু মাণুষ কৃষি কাজে উদ্ভুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষতি বেকার চাকুরীর পিছনে সময় নষ্ট না করে তারা যদি কৃষি,মৎস্য চাষে আগ্রহী হয় তা হলে একদিকে নিজেদের প্রয়োজন মিটবে অন্য দিকে দেশে বেকারত্তের হার কমে আসবে। কারন সরকার প্রাণী সম্পদ,যুব উন্নয়ন,কৃষি,মৎস্য সব বিষয়ে সহজসতের্ ঋণ দিচ্ছে।
এইচকেআর