ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন সহোদর

দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন সহোদর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বড় ভাই সাবেক এমপি। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দুই বার। ছোট ভাই বর্তমানে পৌর মেয়র। দু’জনই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে সাতটি। আলোচিত এই দুই ভাই হলেন, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ও ছোট ভাই পিরোজপুর সদর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। শুধু তারাই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির অভিযোগে দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তারা হলেন— সাবেক এমপি আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীন ও পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের স্ত্রী নীলা রহমান। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর জানান, দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাতটি মামলার মধ্যে তিনটি মামলার চার্জশিট জমা হয়েছে আদালতে। বাকি চারটি মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এসব মামলার চার্জশিটও জমা দেওয়া হবে।

দুদক সূত্র জানায়, এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা তিনটি মামলারই চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার বিচারকার্য চলছে। আদালত আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। পৌর মেয়র মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও তথ্য গোপনের দায়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে একে একে ৫টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুটি  এবং ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। জাল-জালিয়াতির অভিযোগে তিনটি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। তদন্ত সূত্র বলছে, সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি খাস জমি ভুয়া ব্যক্তিদের নামে বন্দোবস্ত দেখিয়েছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা সদরে ভিটি বন্দোবস্ত মামলার মাধ্যমে ৭ ব্যক্তির নামে একসনা বন্দোবস্ত পান। দুদকের তদন্তে ওই নামের কোনও লিজ গ্রহীতাকে পাওয়া যায়নি। সরকারের ওই খাস জমি দখল করে রেখেছিলেন খোদ সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন। এমনকি খাসজমি বন্দোবস্ত নেওয়ার নিয়মনীতির ব্যত্যয় করে স্ত্রীর নামে নির্মাণ করেছেন দ্বিতল ভবনও।

দুদক সূত্র জানায়, সরকারি খাস জমি দখল ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জেলার অতিপরিচিত ‘রাজার পুকুর’ ভরাট করতে অবৈধভাবে প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া নেছারাবাদ উপজেলায় কয়েকটি মৌজায় বিপুল পরিমাণ সরকারি জমি দখলের অভিযোগেরও প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এসব জমিতে তিনি নিজ নামে আউয়াল ফাউন্ডেশনের কার্যালয় নির্মাণ করে নিজ দখলে রাখেন।

দুদক সূত্র জানায়, সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুটি মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। কমিশনের অনুমোদন নিয়ে যেকোনও সময় এই দুই মামলার চার্জশিটও আদালতে জমা দেওয়া হবে।

দুদক সূত্রমতে,  সাবেক এমপি আউয়ালের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির পাশাপাশি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানে তার নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫৫ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানার সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মোট ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৪ হাজার ৮৪৩ টাকার সম্পদ গোপন করার প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত শেষে আউয়ালের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য সন্নিবেশিত করে চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে যেকোনও সময় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমি সরকারের খাস জমি একসনা লিজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলাম। এজন্যই আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। আর আয়কর নথির বাইরে আমার কোনও সম্পত্তি নাই। তৃতীয় কোনও পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এগুলো করাচ্ছে।’ 

সাবেক এমপি আউয়ালের ভাই হাবিবুর রহমান মালেক পিরোজপুর সদর পৌরসভার বর্তমান মেয়র। দুদক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৮ মার্চ মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় মালেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৯৩২ টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। আরেকটি মামলায় পরস্পর যোগসাজশে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ঘুষের বিনিময়ে পৌরসভায় ২৫ জন কর্মচারীকে নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরাসহ মোট ২৮ জনকে আসামি করা হয়।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পৌর মেয়র মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানের বিরুদ্ধে বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। আর ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়েও তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই দুই মামলারও চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে যেকোনও সময় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আই অ্যাম ক্লিন ইমেজের মানুষ। প্রতিপক্ষ কেউ আমার বিরুদ্ধে দুদককে দিয়ে মামলা করিয়েছে। আমার সম্পদ বিবরণীতে যা আছে, সবই আয়কর ফাইলে আছে। আর আমার স্ত্রীর নামে কোনও সম্পদও নেই।’

এদিকে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ কে এম এ আউয়ালকে দল থেকে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সাবেক এমপি আউয়াল বর্তমানে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে বসার জন্য তদবির করছেন। দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্নীতি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় তাকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং জনসাধারণের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন। 


এসএমএইচ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন