ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

নাব্যতা সংকটে ভুগছে কচা ও বলেশ্বর

নাব্যতা সংকটে ভুগছে কচা ও বলেশ্বর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

উপকূলীয় জনপদ পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর কচা নদী ও বলেশ্বর নদের বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এখানকার নদ-নদীর পানিপ্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাওয়ায় বিভিন্ন নদীবক্ষে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচর। এর ফলে দেশি-বিদেশি নৌযান চলাচল এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। নির্দিষ্ট গতিপথ ছাড়া ভাটির সময় দেশি-বিদেশি বড় জাহাজগুলো চলাচল করতে পারছে না।


ফলে নদীবক্ষে ডুবোচর আর পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় ফেরি চলাচলসহ উপকূলীয় নৌ-যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অচল হতে বসেছে। দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এ নদীপথে ছয়-সাত বছর ধরে নৌযান চলাচল একেবারেই কমে গেছে।

পিরোজপুর তথা দক্ষিণাঞ্চলের নদীপথই অর্থনৈতিক বাণিজ্যের অন্যতম উৎস্য। ফলে এখানকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের কাঁচামালের আমদানি-রপ্তানি মূলত নৌযানের মাধ্যমেই করে থাকেন। কিন্তু শীত-গ্রীষ্ম মৌসুমে নদ-নদীর বেহাল অবস্থার কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী তথা নৌযান মালিকদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। ডুবোচরের পাশাপাশি তিন মাস ধরে এসব নদ-নদী কচুরিপানায় ঢেকে থাকার কারণে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে নৌযান চলাচলের ক্ষেত্রে। শুকনো মৌসুমে নদ-নদীর পানিপ্রবাহ প্রকটভাবে হ্রাস পাওয়ার ফলে  অভ্যন্তরীণ খালগুলো শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে ফসলি জমিতে সেচ দেওয়ার মতো পানি মিলছে না এসব খালে। খরা মৌসুমে পুকুর, ডোবা-নালা পানিশূন্য হয়ে পড়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট শুরু হয়েছে নদীবিধৌত এ অঞ্চলের মানুষের।


ঢাকা-পিরোজপুর-বরিশাল-মোংলা বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র নদীপথ কচার বিভিন্ন পয়েন্টে বিশাল আকৃতির চর এবং ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ভাটির সময় দেশি-বিদেশি বড় জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভাটির সময় ছোটখাটো নৌযানও আটকা পড়ছে এসব ডুবোচরে।  
  
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, ইন্দুরকানীর সাউদখালী গ্রাম সংলগ্ন কচা নদীর মাঝখানে ১৯৩৯ সালে প্রায় ৫০০ একর জমি নিয়ে জেগে ওঠে বিশাল আকৃতির চর। এখানে প্রায় দুই দশক আগে থেকে গড়ে উঠেছে বসতি। বর্তমানে এ চরে তিন শতাধিক ভূমিহীন পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এর ঠিক এক কিলোমিটার অদূরে চরখালী প্রান্তে কয়েক দশক আগে জেগে ওঠে আরো একটি বিশাল চর। সেখানে বসতি গড়ে না উঠলেও চাষাবাদ হচ্ছে এবং সবুজ বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। এর ঠিক পশ্চিম প্রান্তে টগড়া ফেরিঘাট এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে জেগে উঠছে নতুন চর। এ কারণে ভাটির সময় এখানে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিদিন। অপরদিকে মাঝের চরের ৫-৭ কিলোমিটার দূরে তুষখালী বন্দরের কাছে কচা নদীর পাশেই নদীর তীর ঘেঁষে জুইন্নার চর নামে আরেকটি বিশাল চর রয়েছে। এই চরে গড়ে উঠেছে হরিণপালা ইকো পার্ক। আর এই পার্ক-সংলগ্ন কচা নদীর মাঝখানে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার জুড়ে একটি বড় ডুবোচর জেগে উঠেছে।  
   
এ ছাড়া এরই ঠিক দুই কিলোমিটার দূরে ইন্দুরকানীর পশ্চিম কলারন গ্রামের বেড়িবাঁধ ঘেঁষে ছয়-সাত বছর আগে গাজীরহাট সংলগ্ন বলেশ্বর নদীতে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে জেগে উঠেছে আরো একটি চর। সুন্দরবনের আবহে বিস্তিৃত ছৈলাগাছে ভরপুর এ চরের এক অংশে বছর দেড়েক আগে গড়ে উঠেছে শ্যামলী নিসর্গ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নামে একটি পার্ক।  

পাশাপাশি উপজেলার টগড়া ফেরিঘাট মোহনা থেকে পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরের খাল পর্যন্ত কয়েক বছর আগে আরেকটি চর জেগে ওঠায় বিভিন্ন নৌযানসহ ফিশিং বোটগুলো খালের ভেতর দিয়ে বন্দরে ঢুকতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। কচা ও বলেশ্বর নদের মোহনায় টগড়া ফেরিঘাট এলাকার দক্ষিণ প্রান্তে কয়েক বছর ধরে জেগে উঠছে আরেকটি বিশাল চর। দিন দিন এ চরের বিস্তৃতি বেড়ে চলেছে। ভাটির সময় নদীর পানি কমে গেলে এ চরের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। এ চরের কারণে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এ জন্য প্রতি শীত-গ্রীষ্ম মৌসুমে নদী খননের কাজ করতে হচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএকে।
 
এদিকে, ইন্দুরকানী বাজার সংলগ্ন বলেশ্বর নদের ওপর নির্মিত শহীদ ফজলুল হক মণি সেতুর উত্তর-দক্ষিণ প্রান্তে তীর ঘেঁষে প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট একটি চর।  তবে গুরুত্বপূর্ণ এ নদী দুটির বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় ডুবোচরের কারণে নদীর গতিপথ ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে। আর নদীবক্ষে ইন্দুরকানী উপজেলার সীমান্তে এ চরগুলো জেগে ওঠায় ৯২.৫৫ কিলোমিটার বিস্তৃত এ উপজেলাটির ভৌগোলিক অবস্থান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে এর সীমারেখা।    
  
চণ্ডীপুর-হরিণপালা ইকো পার্কে নিয়মিত খেয়ার মাঝি মঞ্জু জানান, কচা নদীর মাঝখান দিয়ে যেভাবে ডুবোচর জেগে উঠছে তাতে আর কয়েক বছরের মধ্যে এই নদীপথ দিয়ে জাহাজ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। শুষ্ক মৌসুমে ভাটির সময় নদীর পানি কমে গেলে আড়াআড়িভাবে নদী পার হতে গিয়ে অনেক সময় ছোট নৌযানগুলো ডুবোচরে আটকে যায়। সন্ন্যাসী খেয়াঘাট এলাকার পানগুছি নদীতে নোঙর করা দেশি জাহাজ এম ভি চিটাগাঙের স্টাফ মনির হোসেন জানান, কচা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চর ও ডুবোচরের কারণে ভাটির সময় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
 
বিআইডাব্লিউটিএর টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (সিভিল) মিরাজুর রহমান সোহেল জানান, কচা নদীর ১৭০০ ফুট দীর্ঘ ও ২৪০ ফুট চওড়া এলাকায় এই খননকাজ চলমান রয়েছে। এখানে প্রায় এক লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হবে। যার ফলে টগড়া-চরখালী ফেরিসহ যাবতীয় নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে।   
  
এ ব্যাপারে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম মতিউর রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্যিক এ নদীপথটিতে নির্বিঘ্নে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে এর নাব্যতা রক্ষার জন্য সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।   
   
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবে মাওলা মো. মেহেদী হাচান বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি নদ-নদীতে নতুন নতুন ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। তবে শীত-গ্রীষ্ম  মৌসুমে নদ-নদীর পানিপ্রবাহ কমে যায়। যার ফলে ফেরি ও দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। তবে ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া পয়েন্টে চর জেগে ওঠায় ভাটির সময় টগড়া-চরখালী রুটে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় সেখানে এখন আমাদের ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খননের কাজ চলছে। খননকাজ শেষ হলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন