মথুরায় শাহি ঈদগাহ মসজিদের জমি নিয়ে মামলা

ভারতের উত্তর প্রদেশের জ্ঞানবাপি মসজিদ বিতর্কের অবসান হওয়ার আগেই রাজ্যের মথুরা জেলা আদালতে গৃহীত হলো নতুন মামলা। সেই মামলার আরজি, মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানসংলগ্ন শাহি ঈদগাহ মসজিদের জমি মন্দির কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হোক। মথুরার জেলা ও দায়রা জজ রাজীব ভারতী বৃহস্পতিবার ওই মামলা গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ, প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমির ওপর হিন্দু ও মুসলমানের যে ধর্মস্থান রয়েছে, তার মালিকানা ঠিক কার, জেলা আদালত তা বিচার করবেন।
উত্তর প্রদেশের বারানসিতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরসংলগ্ন জ্ঞানবাপি মসজিদকে নিয়ে যে মামলা বারানসি দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন, তাতে মসজিদের মালিকানা দাবি করা হয়নি। বছরভর পূজা করার অধিকার চাওয়া হয়েছে। কিন্তু মথুরার মামলা হয়েছে জমির মালিকানা ঘিরে। এই মামলার সঙ্গে অযোধ্যার রাম জন্মভূমি বাবরি মসজিদের মামলার চরিত্রগত মিল রয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই দেখার বিষয় হচ্ছে, ধর্মস্থানের চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখতে ১৯৯১ সালে যে কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা নজরে রেখে কী রায় দেন।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন জ্ঞানবাপি মামলা। সর্বোচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামীকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় ওই মামলার শুনানি আবার শুরু হবে। তার আগে বারানসির নিম্ন আদালতে জ্ঞানবাপি মামলার শুনানি স্থগিত থাকবে। ওই আদালতে ইতিমধ্যেই জ্ঞানবাপি মসজিদ জরিপের প্রতিবেদন জমা পড়েছে। সেই প্রতিবেদন ফাঁস হয়ে যাওয়ার জন্য কোর্ট নিযুক্ত কমিশনারকে বরখাস্তও করা হয়েছে। চতুর্দিকে রটে গেছে, জরিপের সময় মসজিদে অজু করার পুকুরের মধ্যে নাকি শিবলিঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, যাকে শিবলিঙ্গ বলা হচ্ছে, তা আদতে এক ফোয়ারা। আদালতে নির্দেশে ওই স্থান নিরাপত্তারক্ষীদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, মুসলমানদের নামাজ পড়ায় কোনো বাধা দেওয়া চলবে না। মসজিদে প্রবেশও অবাধ থাকবে।
হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অযোধ্যায় যেমন রাম, মথুরায় তেমনই জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই স্থান হলো কাটরা স্তূপ। শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানসংলগ্ন শাহি ঈদগাহ মসজিদ। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের মতো শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানও মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ধ্বংস করা হয়। গড়ে তোলা হয় ঈদগাহ মসজিদ।
গত বছর মথুরা দেওয়ানি আদালতে আইনজীবী রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী ও আরও ছয়জন মসজিদের মালিকানা দাবি করে মামলা করেছিলেন। কিন্তু আবেদনকারীদের কেউই মথুরানিবাসী ছিলেন না বলে তা খারিজ হয়ে যায়। এ ছাড়া ওই মামলা ১৯৯১ সালের তৈরি ধর্মস্থান আইনের পরিপন্থী। এবার মামলা হয়েছে জেলা আদালতে। মন্দির-মসজিদের আওতায় থাকা মোট ১৩ দশমিক ৩৭ একর জমির পূর্ণ মালিকানা দাবি করে বলা হয়েছে, অতীতে মন্দির ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের মধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে যে বোঝাপড়া হয়েছিল, তা ছিল বেআইনি। তাই জমির পূর্ণ মালিকানা মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কৃষ্ণের জন্মস্থানের আওতায় আছে ১১ একর জমি, মসজিদের অধীনে ২ দশমিক ৩৭ একর।
জ্ঞানবাপি ও শাহি ঈদগাহ মসজিদসংক্রান্ত মামলা করার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার, উত্তর প্রদেশ ও কেন্দ্রের শাসকদল এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মকে ব্যবহার করে মেরুকরণের রাজনীতি জোরালো করতে চাইছে। তা করা হচ্ছে ২০২৪–এর লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে। এই সন্দেহ ও ধারণা দৃঢ় হওয়ার কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মৌন পালন। স্থানীয় পর্যায়ের হিন্দুত্ববাদীদের এই আইনি পদক্ষেপ নিয়ে কোনো মন্তব্য বিজেপি সরকার বা দল এখনো করেনি। মন্তব্য করা হয়নি ১৯৯১ সালের কেন্দ্রীয় আইন নিয়েও। ফলে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কটিকে জিইয়ে রাখতে চায়। দেখতে চায়, আইন কোন পথে এগোয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) সরব। এই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রচার অধিকর্তা মুনীল আম্বেকর বলেছেন, ঐতিহাসিক সত্য ক্রমশ প্রকাশিত হচ্ছে। এসব প্রকাশ পাওয়া দরকার।
এএজে
