ক্ষমতা কমছে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের


অবশেষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষের সাংবিধানিক ক্ষমতা কমছে। এ ব্যাপারে একমত হয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এ বিষয়ে একটি বিল পাস হয়েছে সোমবার।
শ্রীলঙ্কার পর্যটন মন্ত্রী হারিন ফেরনান্দো জানিয়েছেন, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধানের ২০ নম্বর অধ্যাদেশ সংশোধন করে নতুন ২১ নম্বর অধ্যাদেশের খসড়া পাস হয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ফেরনান্দো বলেন, সংবিধানের ২০ নম্বর অধ্যাদেশ অনুযায়ী এতদিন মন্ত্রিসভার সদস্যদের থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন, সরকারি প্রশাসন ও পরিষেবা, পুলিশ, সরকারি মানবাধিকার সংস্থা, দুর্নীতি তদন্ত কমিশনসহ যাবতীয় সরকারি কার্যালয়ের শীর্ষপদে নিয়োগ ও বরখাস্তের একক ক্ষমতা ছিল শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের। এক্ষেত্রে পার্লামেন্টের পরামর্শ-সুপারিশ নেওয়ার বিষয়ে তার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না এবং এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে কারো কাছে জবাবদিহিতার প্রয়োজনও পড়তো না।
কিন্তু নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে মন্ত্রিসভাসহ সরকারি প্রশাসনে নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে মন্ত্রিসভার পরামর্শ ও সুপারিশকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। পরে ২০১৫ সালে দেশটির সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমিয়ে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বড়ানো হয়।
কিন্তু ২০২০ সালে ফের রাজাপাক্ষে পরিবার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন প্রধামন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্ষের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা ২০ নম্বর অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে। সোমবার মূলত সেটিরই সংস্কার করা হয়।
গুরুতর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও করোনা মহামারির জেরে ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত দেশ শ্রীলঙ্কা। বিদেশী মু্দ্রার রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মত অতি-জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ভারত মহাসাগরের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র।
এর মধ্যে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কায়। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। ফলে গত কয়েকমাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। এছাড়া পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস কিনতে লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ও জ্বালানির সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণ গত এপ্রিল থেকে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। এখনও রাজধানীসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে চলছে সেই বিক্ষোভ।
এএজে
