দুই কারণে অনাবৃষ্টিতে পুড়ছে দক্ষিণাঞ্চল


বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে অনাবৃষ্টি। উপকূলীয় অঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুকিয়ে চৌচির ফসলের মাঠ। নেই সেচ দেয়ার পানি। পুকুরের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান, ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরে বৃষ্টিপাত কমে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। গতবছর ফেব্রয়ারি থেকে মে এই ৪ মাসে মোট ৪৫৯ মিলি মিটার বৃষ্টি হলেও ২০২১ সালে বৃষ্টিপাত কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৪ মিলি মিটার। গতবছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হয়েছে ১৭৯ মিলি মিটার কিন্তু চলতি বছরে এপ্রিল মাসে কোন বৃষ্টি হয়নি। গতবছর মে মাসে ২৭২ মিলি মিটার বৃষ্টি হলেও এবছর মে মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে মাএ ২২ মিলি মিটার।
বরিশালে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক জানান, বায়ুমন্ডলে প্রয়োজনীয় উপাদানের একটিতে অসামঞ্জস্য দেখা গেলে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা দেবে। বৃষ্টিপাত বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে। কিন্তু বতর্মানে বৃষ্টিপাতের তারতম্য বেশি দেখা যাচ্ছে।
প্রথমত, দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে মৌসুমী বায়ু বিপুল পরিমাণ জলীয়বাষ্প নিয়ে আসে, যখন আসে তখন শক্তি সঞ্চার করে বাতাসের আদ্রতা বৃদ্ধি পায় তখনই বৃষ্টিপাত হয় । কিন্তু এ বছর মৌসুমী বায়ু দেরি করে আসছে এবং পর্যাপ্ত জলীয়বাষ্প নিয়ে আসেনি তাই বৃষ্টি হচ্ছে না। এ ছাড়া অন্য একটি কারণ হলো শুষ্ক মৌসুমে পানি না পাওয়ায় নদীর লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিগত বছরের তুলনায় চারগুণ বেশি এবং পানির গতিবেগ সঠিক নেই। লবণাক্ততার কারণে পানি বাষ্পীভূতের হার কমে গেছে তাই বৃষ্টি হচ্ছে না।
এদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব শুরু হয়েছে । আগামী ২৬ মে বাংলাদেশ উপক‚লে ‘যশ’ নামে শক্তিশালী যে ঘূর্ণিঝড় আসছে সেই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হওয়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের অনাবৃষ্টিকে দায়ি করেন গবেষক ড. হাফিজ আশরাফুল হক। তিনি জানান, চলতি মাসেই আসছে ‘যশ’ নামে ঘূর্ণিঝড়।
দীর্ঘসময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সাগরে নিম্নচাপ দ্বিগুণ শক্তিশালী হচ্ছে। সাগরের পুরো বছরই নিম্নচাপ তৈরি হয়, বেশি হয় মার্চ-এপ্রিল ও অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার পর যখন নিম্নচাপ তৈরি হয় তা যে শক্তি সঞ্চয় করে তা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে আঘাত হানে উপকূলে। শুধু ২০২০ সালে বড় বড় ৩ টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে।
এবছর হয়তো আরো হবে। ১৯৯১ সালে লঘুচাপের কারণে যে ঘূর্ণিঝড়টি হয়েছিল ২০২০ সালের আগে বিগত ৩০ বছরেও এমন কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনই এর জন্য দায়ি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল অ্যান্ড এনভারমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা রজনী জানান, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃষ্টিপাতের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে গ্রীণহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ও দূষণের ফলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবার মেঘে জলকণার সংযুক্তির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না।
এই কারনে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন, উৎপাদ, কৃষি আর্থ ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।
এসএমএইচ
