ঢাকা শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

Motobad news

জলেভাসা শেফালীর জীবন সংগ্রাম

জলেভাসা শেফালীর জীবন সংগ্রাম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

আসিফ ইকবাল \

  বেদে স¤প্রদায়ের ঘরে জন্ম হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই জলেভাসা জীবন শেফালী বেগমের। কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় নিজের পরিবার ছেড়ে বছর পাঁচেক আগে বরিশালের বাসিন্দা সোহাগ মিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুখ সয়নি কপালে। ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়নি কিছুই। স্বামী তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর শুধু কষ্ট বেড়েছে। পরিবর্তন বলতে এটাই। তাই এখন নদীতে নৌকা চালিয়েই জীবন চলছে শেফালী বেগমের। এখন এক বছর বয়সী একটি মেয়ে কোলে নিয়ে নৌকা চালিয়ে সামান্য উপার্জন দিয়ে জীবন চলে তাঁর।
 
 শেফালী জানান,  জন্মের পর মা-বাবার মুখ দেখেননি। কোথায়  কীভাবে হারিয়েছেন, তেমন কিছু মনে নেই তার। বাবা-মা’ও খোঁজ নেয়নি। এরপর নানীর সঙ্গে বেদে পরিবারগুলোর সঙ্গে নৌকায় ভেসে বড় হন। বরিশালে আসার পর সোহাগের সঙ্গে প্রথমে ভালোবাসাবাসি। পরে ভালোবাসা থেকে বিয়ে। এভাবে কিছুদিন ভালোই চলছিল তার। সোহাগ বিভিন্ন দিনমজুরি কাজ করতেন। কিন্তু বিয়ের বছর দুয়েক পর তাদের ঘরে এই মেয়েটি জন্ম নেওয়ার পর একদিন  কোনো কিছু না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সোহাগ। এরপর বিভিন্ন জায়গা খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। এরপর বাঁচার পথ না পেয়ে ঘরে জমানো কিছু টাকা দিয়ে একখানা নৌকা কিনে নদীতে যাত্রী পারাপার শুরু করেন শেফালি। শুরু হয় জীবনের নতুন সংগ্রাম। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটিকে কার কাছে রাখবেন? তাই নিজের কোলে রেখেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নৌকা চালান শেফালি। তবুও অভিযোগ নেই তার স্বামীর ওপর। বলেন, আমাকে ভালো লাগেনি বলেই তো সে ছেড়ে চলে গেছে। বরং তাই ভালো হয়েছে। অন্যথায় কাছে থেকে ঝামেলা করলে সংসারে আরো অশান্তি হতে পারতো। তাই সংগ্রাম করে হলেও জীবন ভালোই কাটছে তার।


   শেফালী জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাকে বেশ ভালোবাসেন। তাই মাঝে মধ্যে জেলেদের সাহায্য করার সময় তাকেও কিছু চাল দেওয়া হয়। তাতে তার বেশ উপকার হয়। কিন্তু বৃষ্টির দিনে কষ্টের শেষ থাকে না শেফালির। ছোট্ট মেয়ে নিয়ে নৌকা চালাতে পারেন না। তখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়।

   স্থানীয়রা জানান, শেফালী সংগ্রামী মানুষ। নিজে কষ্ট করে চলে। কিন্তু কখনো কারো সাহায্য নেয় না। তবে তাঁর মেয়েটির সাহায্যের জন্য সরকার ও বিত্তবানরা এগিয়ে আসা উচিত।

 শেফালি আরো জানান, তাঁর বয়স মাত্র ৩০ বছর। কিন্তু দিনভর অমানসিক পরিশ্রমে তার শরীরে এখন বার্ধক্যের ছাপ। নদী পাড় হতে জনপ্রতি ৫ টাকা করে ভাড়া পান। সারাদিনে রোজ ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশো টাকা আয় হয়। কিন্তু প্রতিদিন নৌকা চালানো সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি।
 
 শেফালী আফসোস করে বলেন, ছোটবেলায় বড় হয়েছেন বেদে পল্লিতে। জন্মের পর মায়ের চেহারা পর্যন্ত দেখেননি তিনি।  নানীর কাছে থাকার সময় প্রথাগত নিয়ম ভেঙে বিয়ে করেছিলেন একজনকে। তবে সে সম্পর্কও টেকেনি। হাসপাতালে ফেলে ছোট ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন তার স্বামী। সেই থেকে ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়েই দিনপার করছেন শেফালী। এজন্য মানুষের নানা কটূকথা শুনতে হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। সব সহ্য করে কোলের মেয়েকে বড় করার চেষ্টায় দিন কাটছে শেফালীর।

সারাদিন কাজ শেষে নিজের ছোট্ট ঘরে মেয়েকে নিয়ে থাকেন ঘরের কাজ করেন শেফালী। তিনি চান তার নিজের ছোট্ট মেয়েকে পড়াশোনা করে ভালোভাবে মানুষ করতে। মেয়েকে যেন সমাজের কট‚কথার মুখে তাকে পড়তে না হয়।

এদিকে শেফালির দুর্দশার খবর শুনে তদন্ত করে তাকে সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি বলেন, শেফালিকে সাধ্যমতো সরকারি সাহায্য করা হবে।
 


এমএন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন