ঢাকা শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Motobad news

বাবা-মাসহ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার শিশু, বিচার নিয়ে এবারও সংশয়!

বাবা-মাসহ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার শিশু, বিচার নিয়ে এবারও সংশয়!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বিপ্লব রায় \ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক,মতবাদ

জমি ও টাকা নিয়ে প্রতিবেশির সঙ্গে বিবাদ। তাই ৫ বছরের ব্যবধানে গত শুক্রবার রাতে আবারো অ্যাসিড জাতীয় দাহ্য পদার্থ দিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে হামলার শিকার হয়ে পরিবারসহ হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ খাদিজা বেগম (২২)। এতে পুড়ে ছোপ ছোপ কালো হয়ে গেছে তার পুরো পিঠ। বাদ পড়েনি দেড় বছর বয়সী শিশু জান্নাতিও। ছোট ছোট দাগে ঝলসে গেছে তার ফুটফুটে মুখটি। হঠাৎ দেখলে শিউরে উঠতে হয়। অন্যদিকে বাম চোখটি হারাতে বসেছে খাদিজার হতদরিদ্র স্বামী রিয়াজুল মিয়া। তার মুখেও ঝলসানো দাগ। যদিও শরীরে জ¦ালাপোড়া নেই তাদের। তবে ক্ষতস্থানগুলো বিভৎস হয়ে গেছে। তাই জীবন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না হতদরিদ্র এই পরিবারটির।

গত ২৮ জানুয়ারি রোববার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, মা-বাবার সঙ্গে হাসপাতালের বিছানায় বসে খেলা করছে জান্নাতি। একটু পর পর এটা সেটা বায়না ধরছে, খাবার খাচ্ছে। কিন্তু ছোট্ট শিশুটি কিছুই বুঝতে পারছে না, কত বড় সহিংসতার শিকার হয়েছে সে।

         এ প্রতিবেদক হাসপাতালে যাওয়ার পর শরীরের ক্ষতচিহ্নগুলো দেখান তারা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিয়াজুল বলেন, ‘ভাই আমার চোউখটার মণির উপর এসিড পড়ছে। ডাক্তার কইছে এডায় আর কাম অইবে না। কি করমু? নদীতে মাছ ধইর‌্যা আয়-উপার্জন কইর‌্যা চলি। এহন ক্যামনে কাম করমু আর ক্যামনে ওষুধ কিনমু, ক্যামনে সোংসার চালামু। দিশা পাইতেছি না। চার-পাঁচ বছর আগে একই রকম হামলার ঘটনায় বিচার হলে এমন ঘটনা ঘটতে কেউ সাহস পেত না বলে আক্ষেপ করেন রিয়াজ।

বরিশাল সদর উপজেলার নেহালগঞ্জ গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত শুক্রবার রাতে জেলে রিয়াজের ওপর  অ্যাসিড জাতীয় দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে মারার অভিযোগ ওঠে।  রাত ৯ টার দিকে ঘরে ঘুমিয়ে পড়ার পর জানালা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে মারে প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে তাদের গায়ের কাঁথা-কম্বল পুড়ে গিয়ে রিয়াজের মুখের ডান পাশ এবং তাঁর দেড় বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতির মুখের বিভিন্ন স্থানে ছিটিয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি দগ্ধ হয়েছেন রিয়াজের স্ত্রী খাদিজা বেগম। তারা তিনজনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

যদিও হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। মুখমÐলে যে দাগ রয়েছে, তা চিকিৎসায় ঠিক হয়ে যাবে। তবে তার মা বেশি দগ্ধ হয়েছেন। 
    তিনি বলেন, যেকোনো দাহ্য পদার্থ কারো দিকে ছুঁড়ে মারা অবশ্যই ক্রিমিনাল অফেন্স। 

 রোববার দুপুরে হাসপাতালের সার্জারি মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় খাদিজা বেগমের সঙ্গে।  মেয়ে  জান্নাতি শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকলেও বয়স খুব কম হওয়ায় তাকেও রাখা হয়েছে মায়ের কাছে। হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সাজারি ওয়ার্ডে শয্যা না থাকায় তাদের তিনজনকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভিন্ন ভিন্ন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।  

         খাদিজা  ওই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে  বলেন, গত শুক্রবার রাতে খাবার খেয়ে তাঁরা শুয়ে পড়েন। জানালার পাশে তিনি, মাঝখানে জান্নাতি এবং এরপর  স্বামী রিয়াজ হাওলাদার শুয়ে ছিলেন। এসময়  তিনি টের পর পানির মতো  কিছু একটা তাঁর ওপর ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তাদের শরীর জ্বলতে থাকে। তখন ওঠে দেখতে পান, কয়েকজন লোক বাইরে দৌড়ে পালাচ্ছে। এরই মধ্যে তাঁদের গায়ের কাঁথা-কম্বল পুড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকার মতো পড়ে যন্ত্রণা করছে। 

   মেয়ে জান্নাতি এবং স্বামী রিয়াজের মুখেও ছোপ ছোপ ফোসকার মতো পড়ে গেছে এবং যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পরে প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে ওই রাতেই তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। 
রিয়াজ হাওলাদার অভিযোগ করেন, তিনি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবেশী ও ফিরোজ ও মিরাজদের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে তাঁর পুরনো বিরোধ রয়েছে। এছাড়া কয়েক বছর আগে ফিরোজ ও মিরাজ তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। এই পাওনা টাকা চাইতে গেলে তাঁরা অনেক দিন ধরে তাঁকে হুমকি দিচ্ছিলেন। এর জের ধরেই তাঁদের ওপর অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে অ্যাসিড ছুঁড়ে পালানোর সময় তাঁর স্ত্রী ফিরোজ, মিরাজ, নাসিরকে চিনে ফেলেন। 

এই ঘটনায় শনিবার রাতে বরিশাল নগরের বন্দর থানায় রিয়াজ হাওলাদারের বাবা রশিদ হাওলাদার বাদি হয়ে ৭ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। 
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন- খালেক হাওলাদারের তিন ছেলে ফিরোজ হাওলাদার, মিরাজ হাওলাদার, নাসির হাওলাদার ও মোখলেস হাওলাদারের ছেলে রাকিব হাওলাদার। এরা রিয়াজের প্রতিবেশী।

 ওসি আরো বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ভুক্তভোগী রিয়াজ ও তাঁর স্ত্রী সুস্থ হওয়ার পর তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আমরা ঘটনাস্থলসহ অন্যান্য নানা বিষয় এরইমধ্যে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি।
 


এমএন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন