ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

Motobad news

দীর্ঘস্থায়ী রোগ ডায়াবেটিস

দীর্ঘস্থায়ী রোগ ডায়াবেটিস
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সারাবিশ্বেই ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে চলেছে। বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪৬ কোটিরও বেশি। কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতি আর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এই সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে চলছে

১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ৪৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ কোটি ৭০ লাখে।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি বহুমূত্র রোগ। দেহে ইনসুলিন নামক হরমোনের ঘাটতির কারণে রক্তে বেড়ে যায় গ্লুকোজের মাত্রা। একসময় প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে গ্লুকোজ। দেহে ইনসুলিন ও গ্লুকোজের বিপাকজনিত এ গোলযোগ অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিসকে মধুমেহ রোগও বলা হয়। (ধাপ-১) এই ধরনের রোগীদের ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। যার কারণে সারাজীবন তাঁদের ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। এই শ্রেণির রোগীকে ইনসুলিননির্ভর রোগী বলা হয়। তবে বাংলাদেশে ধাপ-১ রোগীর সংখ্যা খুবই কম।

(ধাপ-২) :এ ধরনের রোগীর দেহে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা পর্যাপ্ত থাকে না কিংবা যতটুকু উৎপাদন হয়, তা দেহের জন্য যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস : অনেক সময় সন্তান গর্ভে এলে মায়েদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আবার সন্তান প্রসবের পর ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যায়।
অন্যান্য কারণ : অগ্ন্যাশয়ে বিভিন্ন রোগ, হরমোনের আধিক্য, সংক্রামক ব্যাধি এবং জেনেটিক কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো :
-ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
- তেষ্টা পাওয়া
-নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদা
- প্রচণ্ড পরিশ্রান্ত অনুভব করা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- শরীরের বিভিন্ন অংশের কাটাছেঁড়া সহজে না সাড়া।
-কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।
- প্রদাহজনিত রোগে বারবার আক্রান্ত হওয়া।
- হাতে-পায়ে ব্যথা বা মাঝেমধ্যে অবশ হয়ে যাওয়া। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো
সব সময় নাও থাকতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও জটিলতা প্রতিরোধের অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই জেনে নিন ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ না থাকলেও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।
- বয়স ৪৫ বা তার বেশি হলে।
- স্থূল ব্যক্তি।
-রক্ত-সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস থাকলে।
-শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি।
- প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে।
- নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা অধিক ওজনের সন্তান প্রসবের পূর্ব ইতিহাস।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে।
- উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক হলে।
-রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি এবং এইচডিএলের মাত্রা কম থাকলে।

যাঁদের রয়েছে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা
ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না এমন স্থূলকার ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ছাড়াও যাঁদের বংশে দাদা-দাদি, বাবা-মা, নানা-নানির ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের এই রোগটি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে করণীয়
খাদ্য, ওষুধ, ব্যায়াম, শৃঙ্খল ও শিক্ষা- এই পাঁচটি বিষয় নিয়ন্ত্রিত রাখবে ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মেনে চলতে হয় একটি নির্দিষ্ট নিয়ম। দেহের পুষ্টিগুণ বজায় রেখে খাবার গ্রহণ করতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে এবং চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যায়াম শরীর সুস্থ রাখার সঙ্গে সঙ্গে দেহে ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নিঃসরণে পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীকে অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ এবং ইনসুলিন নিতে হবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সুচিকিৎসার জন্য রোগী এবং রোগীর স্বজনের ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। সর্বোপরি প্রয়োজন শৃঙ্খল জীবনযাপন, সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, পায়ের বিশেষ যত্ন, মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার, নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ নিয়ন্ত্রণ করবে ডায়াবেটিস।
 


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন