মঠবাড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জীবন চলছে অনাহারে-অর্ধাহারে


সনদ থাকার পরও স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মো. হারুন অর রশিদ।
পারিবারিক দৈন্যদশায় তিনি ২০০৬ সালের ১৬ ফ্রেরুয়ারী মৃত্যু বরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রশিক্ষণ সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র ও পরিচয়পত্র নিয়ে স্বীকৃতি পেতে আজও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তাঁর পরিবার। মো. হারুন অর রশিদ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের উত্তর মিঠাখালী গ্রামের মৃত সেরাজ উদ্দিন আকন এবং মৃত সাফিয়া খাতুনের সন্তান। বতর্মানে তাঁর স্ত্রী দুই মেয়ে ও এক প্রতিবন্ধি ছেলে রয়েছে। মানবেতর জীবন-যাপনকারী এ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের আকুতি মুক্তিযুদ্ধের এতটা বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রামবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে চারদিকে যুদ্ধের যখন ডামডোল চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করতে লোক নেয়া হচ্ছে, প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে এলাকার যুবকরা মিলে নিয়মিত রেডিও শুনতেন। তখন দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ব হন তিনি। এলাকার অবস্থা তেমন সুবিধাজনক না হওয়ায় নিজের ও পরিবারের কথা না ভেবে ১৭ বছরের ওই যুবক পাড়ি জমান ভারতে। ভারতের ৯নং সেক্টর আমলানী যুব শিবির থেকে হায়ার ট্রেনিং নেন। সেখানে চার সপ্তাহের ট্রেনিংয়ে সংক্ষেপে যুদ্ধের কলাকৌশল শিখে নেন। তার ব্যাচে ছিল ৩০ জন যোদ্ধা।
হারুন অর রশিদের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ক্রন্দনস্বরে ক্ষোভের সাথে বলেন, বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় তার সিরিয়াল ছিল ১২৮ নম্বর। সরকার চেষ্টা করছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তত করতে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই হয়। যে টাকা দিতে পেরেছে তাকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা টাকা দিতে না পারায় সব কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্বেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে বাদ পরেছে। আমার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণ স্বরূপ প্রশিক্ষণ সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র ও পরিচয়পত্র থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত করাতে পারিনি। আমার কাছেও টাকা চাওয়া হয়। টাকা দিতে পারিনি বলে, যাচাই বাছাইয়ের দিনে আমার স্বামীর সাক্ষীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। ফলে আমার স্বামীর নাম তালিকাভূক্ত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হয়েও আমাদেও অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এব্যাপরে মঠবাড়িয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার বাচ্চু মিয়া আকন বলেন, হারুন অর রশিদ সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়াটা সত্যিই দুঃখ জনক।
এইচকেআর
