সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মী লালমোহন হাসপাতালে খাবার সরবরাহ


ভোলার লালমোহন উপজেলা হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মী হয়ে আছে। হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহে একই প্রতিষ্ঠান ৬ বছর ধরে দায়ীত্ব পালন করছে।
ফলে নিজের ইচ্ছেমতো খাবার দিচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠান। কখনো পঁচা রুটিও রোগীদের নাস্তায় দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দুপুরের খাবারে ব্রয়লার মুরগিও পরিমাণ মতো পায় না রোগীরা। কোন রকম এক টুকরো দিয়ে রোগীদের খাবার শেষ করা হয়। রাতেও এক টুকরো মাছ বা ডিম। রোগীরা খাবারের ব্যাপারে অভিযোগ দিলে উল্টো হয়রানির হতে হয়। এভাবেই চলছে লালমোহন হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহ।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মহসিন খান জানান, প্রতি রোগীর জন্য দৈনিক ১৭৫ টাকা বরাদ্দ আছে। হাসপাতালের প্রধান সহকারী নুরুজ্জামান জানান, বিগত ৬ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠান রোগীদের পথ্য সরবরাহের দায়ীত্বে রয়েছেন।
ভোলার সেতু এন্টার প্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পথ্য সরবরাহের জন্য কাগজে কলমে থাকলেও মূলত পথ্য সরবরাহ করছেন লালমোহনেরই লোক। প্রতি মাসে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিল তুলে নিচ্ছেন তারা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানান হাসপাতালের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন প্রধান সহকারী নুরুজ্জামান। সে নিজেও একজন ঠিকাদার। তাছাড়া হাসপাতালের রান্নার সকল সবজি নুরুজ্জামানের খামার থেকে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যার লালমোহন হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহ, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য গোপনে দরপত্র আহবান করা হয়। নেগজিয়েশনের মাধ্যমে নির্ধারিত ব্যক্তিদেরই এসব কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়।
যার ফলে বারবার একই প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়ে আসছে। শনিবার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ, যন্ত্রপাতি (এমএসআর) ক্রয়ের দরপত্রের সিডিউল জমা ও খোলার নির্ধারিত তারিখ ছিল। নিয়মরক্ষার মাত্র ৩জন ঠিকাদারের দরপত্র পাওয়া যায় টেন্ডার বাক্সে।
অনেকটা গোপনীয়ভাবে দরপত্র আহবান করে গোপনেই নির্দিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ফরম বিক্রি করা হয়। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শনিবার দরপত্র বাক্সে ফেলা হয়। দুপুর ১টায় দরপত্র খোলা হলেও ৩জন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কেউই উপস্থিত ছিলেন না
। ঢাকা থেকে এক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দুপুর ১২টার আগে দরপত্র বাক্সে ফেলে বাক্স খোলার আগেই চলে যান। অপর একজন একাই দুই প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাক্সে ফেলেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও টেন্ডার কমিটি দরপত্র বাক্স খুলে ৩ প্রতিষ্ঠানেরই দরপত্র পান।
জানা গেছে, নির্দিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিগত বছরেও একই প্রক্রিয়ায় রোগীদের পথ্য সরবরাহ ও ওষুধ সামগ্রী কেনার টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৈয়বুর রহমান জানান, দরপত্রে আর কেউ অংশ নিতে পারেনি কেন সে বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। আমাদের দেখার বিষয় নিয়মের মধ্যে আছে কি না।
এইচকেআর
