ফের বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য


বরিশালে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে রোগী ধরার দালাল চক্র। তাদের প্রতারণায় নিঃস্ব হচ্ছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধারণ রোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে যত্রতত্র গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের নিয়ে আসার জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে একাধিক দালাল নিয়োগ করা রয়েছে। এর মধ্যে গির্জা মহল্লা, আগরপুর রোড, কাকলির মোড়, বাটারগলি, বিবির পুকুর পাড়, অশ্বিনী কুমার হল চত্ত্বর, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের সামনে এ চক্রের সদস্যদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা।
এছাড়া রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড, নথুল্লাবাদ ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় এসব দালালের তৎপরতা দেখা গেছে। দূরের রোগীরা চিকিৎসা বরিশালে এলেই দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের ঘিরে ধরে। পরে সহায়তার নামে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় দালাল চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে সহিদ। তার চক্রে কাজ করছে রিপন, রুহুল, নাসির, টেন্ডার আনিস, আনোয়ার, কালা মানিক, পাগলা মানিক, বাচ্চু, কামাল লিটন ও মনির।
এদিকে দালাল চক্রটি সদর রোডের পাশাপাশি নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট এলাকায় রোগী ধরার ফাঁদ পাতে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই অটোরিকশা ও রিকশাচালক বেশে সাধারণ রোগীদের ফাঁদে ফেলছে। রিকশাচালক বেশে এ কাজ করছে- শাহ আলম, লিয়াকত ও সোহরাব। সোহরাব বেশিরভাগ সময় লঞ্চঘাট এলাকায় রিকশাচালক বেশে রোগী ধরার কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, জনবহুল এলাকা সদর রোড, এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক, বিবির পুকুর পাড় এবং ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা রোগী নিয়ে এলেই নমুনা পরীক্ষার ফি হিসেবে নেয়া মোট টাকার ৪০ থেকে ৫০ ভাগ টাকা তাদের দিয়ে দিতে হয়। এ রকমের কোনো চিকিৎসকের কাছে রোগী পাঠানো হলে সেই চিকিৎসকের ফি ৮০০ টাকা হলে দালাল পায় ৩০০ টাকা।
বাউফল থেকে আসা নিজাম তালুকদার বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মায়ের নিউরোর সমস্যা নিয়ে বরিশালে আসার পর ‘বেলভিউ ডায়াগনস্টিকের গলির মাথায় দু’জন লোক নানা ছলে কথা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের পছন্দের চিকিৎসক ভারতে রয়েছেন বলে অন্য চিকিৎসকের কাছে নেয়ার চেষ্টা করে।
পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা দালালদের হাত থেকে কৌশলে রক্ষা পান। একই রকম অভিজ্ঞতা কলাপাড়ার লিটন হাওলাদারের। তিনি বলেন, একজন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার জন্য বরিশালে আসার পরই রুপাতলী বাস টার্মিনালে দালালের খপ্পরে পড়েন। পরে কোন রকম তাদের হাত থেকে রক্ষা পান তিনি।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষ শহরে চিকিৎসার জন্য আসে। কিন্তু সেই টাকা প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে যায় দালাল চক্রের সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।
এইচকেআর
