ঈদের আনন্দ নেই জেলেপাড়ায়, চলছে নীরব হাহাকার


রাত পোহালেই ঈদ। ঈদ আনন্দে মেতে উঠবেন সবাই। শেষ মূহুর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত, সেই সময়ে দৌলতখানের জেলেপাড়ার চিত্র ভিন্ন ।
ঈদ এলেও, ঈদের আমেজ নেই জেলে পরিবারের মাঝে। উপজেলা মৎস্যবিভাগের সূত্রমতে, মার্চ-এপ্রিল ২ মাস মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে জাটকাসহ সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য গরু ও উপকরণ দেওয়া দেওয়া হয়।
জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে মাছ ধরতে না পারায় জেলেরা পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ঈদে স্ত্রী- সন্তানের নতুন জামা- কাপড় কেনা তো দূরের কথা, দু'বেলা দুমুঠো খেতেই হিমশিম খাচ্ছেন জেলেরা। জেলেদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারি আইন মেনে দুই মাস তারা নদীতে নামছে না।
বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও নেই। কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। এসময়ে সরকারি খাদ্য সহায়তার চালও ঠিকমতো পাচ্ছেন না জেলেরা। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এনজিওর কর্মকর্তার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেক জেলে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে উপজেলার কয়েক হাজার জেলে পরিবারের।
দৌলতখানের বটতলা মাছঘাট এলাকার মালেক মাঝি বলেন, 'নদীতে মাছ ধরইয়্যা সংসার চালাই। অভিযানের কারনে নদীতে নামতে পারিনা, সংসার চলবে কেমনে।' গুপ্তগঞ্জ ঘাটের জেলে ইউছুপ আলী বলেন, 'অভিযানের মধ্যে সরকার চাউল দেয়, তাও ঠিকমতো পাইনা। আমাগো চাউল সবাই খায়।'
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মাছঘাটে জেলেরা পুরনো জাল সেলাইয়ের কাজ করছে। কেউ কেউ নৌকা মেরামত করছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে নদীতে ইলিশ শিকারে ছুটবেন তারা।
তাই জাল সেলাই ও নৌকা মেরামত করে সময় পার করছেন। দিন শেষে মালিক কিছু টাকা দেয়, তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। ভবানীপুর ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী আঃ মন্নান বলেন, নদীতে ২ মাস সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
মাছ না ধরলে জেলেদের সংসার চলে না। ঈদে পরিবারের জন্য নতুন পোশাক কেনা, সংসারের খরচ মিটানো সবই ধারদেনা করে হচ্ছে। দৌলতখান সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসনাইন বলেন,
দৌলতখানে ৩০ হাজারেরও বেশি জেলে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে ২২ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এখন মার্চ- এপ্রিল দু' মাস অভয়াশ্রম। এসময়ে মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকায় জাটকাসহ সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধকালীন সময়ে মৎস্যবিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে নদী থেকে সবধরনের অবৈধ জাল উচ্ছেদ করেছে।
এসময়ে জেলেরা ৪০ কেজি করে ৪ মাস চাল পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলেদের বিকল্প কর্মস্থান হিসেবে গরুসহ উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। তবে চালের পরিমাণ বাড়ানো হলে জেলেরা আরও বেশি উপকৃত হত।
এইচকেআর
