সেন্ট মার্টিন দ্বীপ লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই: প্রধানমন্ত্রী


২০০১ সালে বিএনপি গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল এখন তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে আসতে চায় কি না এই প্রশ্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২১ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে উত্তরে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। ফলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে। নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? আমি এটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কন্যা, আমার হাত দিয়ে এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনও যদি বলি, ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ কারো কাছে লিজ দেবো তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি তো সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না, আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমি কাউকে খেলতে দেবো না।
আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নাই। আর আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী, কর্মকাণ্ড চালাবে, কাউকে আঘাত করবে, এ ধরনের কাজ আমরা হতে দেবো না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। এমনি মিয়ানমার থেকে যে ১০ লাখের মতো রিফিউজি এসেছে তাতে তো আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। এরা যাতে ফেরত যায় তার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুরোধ করছি, কিন্তু আমরা তো ঝগড়া বা যুদ্ধ করতে যাইনি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, এই নীতিতে বিশ্বাস করি সেটাই মেনে চলি। আমর প্রশ্ন এখানেই আজকে যে বিএনপি বা কিছু দল মাঠে নেমেছে, এদের অসুবিধাটা কোথায়, সমস্যাটা কী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন, আমি আবারও বলবো যেহেতু আমাদের গণতন্ত্র ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসি টাইপের ঠিক ইংল্যান্ড ও অন্যান্য জায়গায় যেভাবে নির্বাচনটা হয় ঠিক সেভাবেই আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন আমাদের বিরোধীদল থেকে নানা প্রস্তাব, এখন আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়াই বলেছিল যে পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নাই। এখন তারা আবার সেটা চায়, এই পদ্ধতিটা তাই নষ্ট করেছে। তারাই নিজেরা না করে দিয়েছে সেইটাকেই তারা আবার ফেরত চাচ্ছে।
অথচ উচ্চ আদালতের রায় আছে এবং সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে যে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। এটা উচ্চ আদালতের রায়েও আছে আবার আমাদের সংবিধানেও উল্লেখ করা আছে যে যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না দেবে সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিত জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতই আসতে হবে।
এটা সবাই জানে, জানার পরেও আমি জানি না কেন সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি চেষ্টা করে। উদ্দেশ্যটা কী, তার মানে এই যে গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। এই দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছর বাংলাদেশটা যে সুষ্ঠুভাবে চলছে, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে সেটাকে নষ্ট করা। দেশবাসী এটা কীভাবে নেবে সেটাই আমার প্রশ্ন। তারা কী গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান, অর্থনৈতিক উন্নতি চান, দেশের মানুষের কল্যাণ চান, নাকি আবার সেই ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই ইমার্জেন্সি, আবার সেই ধর-পাকড় সেইগুলো চান।
এটা দেশের মানুষকেই বিবেচনা করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করার জন্য যেভাবে অগ্নিসংযোগ করেছে, ৩৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, তিন হাজারের ওপর মানুষকে পুড়িয়েছে। কত মানুষ এখনও পঙ্গু হয়ে আছে, কত পরিবার ধ্বংস হয়ে আছে, জ্বালাও পোড়াও করে মানুষের যে ক্ষতি করেছে মানুষ তা ভুলে যাবে।
এইচকেআর
