বাজারে সব পণ্যের দামই বাড়ে, কমে না একটিরও


শনিবার দুপুরে সাগরদী বাজারে পণ্য কিনতে এসেছেন নগরীর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারি নাদিরা বেগম (৪৫)। তিনি বলেন, প্রতিমাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকা বেতন পাই। কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যর যে দাম, তাতে বেতনের টাকা দিয়া কিনতে পারি না। বাজারে শুকনা মরিচের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর আলুর কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কি আর করমু বেঁচে থাকার তাগিদে ২০ টাকার শুকনা মরিচ ও আধাকেজি আলু কিনেছি। ভর্তা করে সন্তানদের নিয়ে দু’মুঠো ডাল ভাত খাবো। মাছ-মাংস এখন আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।
নাদিরা বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে, মেয়ে নিয়ে ভাইয়ের সাথে থাকি। একই পরিবারে থাকার কারণে বেতনের একটি অংশ তাকে দিতে হয়। বাকি টাকা দিয়ে আমাকে বাজার করতে হয়। তিনি আরো বলেন, সরকার যদি একটি নিত্যপণ্যর দাম বাড়ায় তাঁর চেয়ে বাড়তি দাম হাকিয়ে নেয় ব্যবসায়িরা। কিন্তু কমানোর ঘোষণা আসলে নানা অজুহাতে আর কমে না।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিজীবী জামাল হোসেন বলেন, ভাই সরকার গ্যাসের দাম কমিয়ে ৯৯৯ টাকা করেছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। এখনো দোকানে এই দাম কার্যকর হয়নি। যে যেভাবে পারছে, দাম হাঁকিয়ে নিচ্ছে। ১ হাজার ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১১৩০ টাকা পর্যন্ত গ্যাসের দাম নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারকে বৃদ্ধাগুলি দেখালোও কেউ তাদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বাংলাবাজারের তোতা এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা জানান, গ্যাসের দাম কোম্পানি থেকেই কমায় না। বসুন্ধরার গ্যাস দেয়াই বন্ধ করে দিয়েছে ডিলাররা। এরকম অনেক কোম্পানিই এমন করে।
এদিকে একাধিক বাজারে ঘুরে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়েছে মসুর ডাল। এর মধ্যে দেশি মুসুরির ডাল কেজি প্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০, ইন্ডিয়ান মসুর ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া চিনি ১০ টাকা বাড়িয়ে কেজি প্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পিঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবকিছুই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
এর মধ্যে শুকনা মরিচ (সিটকি) ৬০০ ও সাধারণ ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েক মাস আগেও ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া এখনো বাজারে কমেনি কাঁচা মরিচের দাম। প্রতিদিনই কেজিতে ১০০ টাকা বাড়ছে। বর্তমানে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।
এছাড়া আধাকেজি প্যাকেট (ডিপ্লোমা) গুঁড়ো দুধ ৪১০ টাকা, স্টারশিপ ৩৫০ টাকার প্যাকেটে বেড়ে ৩৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ১০০ গ্রাম জিরা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১২৫ টাকা। বিভিন্ন টিস্যুর দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অপরদিকে সরিষা তেল (রাঁধুনি) আধাকেজি ১৮৫, এইসকেআই (নতুন ব্র্যান্ড) ১৯০ টাকা, রাঁধুনি মসলার প্যাকেট ৬৫, লবণের কেজি ৪০,টোস্ট বিস্কুট ৫০, মুড়ি আধা কেজি ৫০, ফেয়ার এন্ড লাভলী ৫০ গ্রাম ২৫০ ও ৮০ গ্রাম ২৯০, স্যান্ডেলিনা সাবান ১০০ গ্রাম ৫৫ টাকা, ডেটল সাবান ১২৫ গ্রাম ৮৫, মিস্টার নুডুলস ৮ প্যাকেট ১৪০, ১২ প্যাকেট ২৪০ টাকা, পোলাও চাল ১ কেজি এসিআই প্যাকেট ১৭০ টাকা, চাষি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদি ব্যবসায়ী খোকন হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট নয়, পাইকাররা যে ভাবে দাম নেয়, তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করা হচ্ছে।
বরিশাল জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, আইন সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না বলেই ব্যবসায়ীরা সরকারের নির্দেশ তোয়াক্কা কওে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার তাগিদ দেন তিনি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে ব্যবসায়ীদের বোঝানো হচ্ছে। সম্প্রতি গ্যাস ব্যবসায়িদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হলে আইনের আওতায় আনা হবে।
