নিযার্তনের শিকার স্কুলছাত্রীসহ পরিবারের তিনসদস্যকে চারদিন পর উদ্ধার


চারদিন আটকে রেখে মোবাইল চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীসহ পরিবারের তিন সদস্যকে উদ্বার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার তাদের উদ্বার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমাউন কবির সাগর। তিনি বলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরা গরিব পরিবার, এদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে মোবাইল চুরি করার অপবাদ দিয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুর্বনা (১২), তাঁর বাবা বলাই কর্মকার (৫৫), মা স্ত্রী রাধা রানী কর্মকার (৪৫)কে মারধর করে শহর ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও তাঁর স্ত্রী। তাদের উপর এ নিযার্তন ১৮ জুলাই পর্যন্ত চালানো হয়। নির্যাতনের ঘটনা কাউকে না বলার হুমকী দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ রাসেল ও তাঁর স্ত্রী পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শহরের নতুন কলাবাগান সড়কে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন বলাই কর্মকার। শুক্রবার রাতে মোবাইল চুরি করার অপবাদ দিয়ে প্রথমে বালাই কর্মকারকে নিযার্তন করা হয়। পরে তাঁর স্ত্রী রাধা রানী কর্মকার ও তাদের মেয়ে সুর্বনার উপর নির্যাতন চালানো হয়। এভাবে চারদিন তাদের আটকে রেখে নিযার্তন চালায় ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও তাঁর স্ত্রী।
নির্যাতনের ঘটনা কাউকে না বলার হুমকী দেওয়া হয়। নির্যাতনে বলাই কর্মকারের ডান পা ফুলে গেছে। তাঁর স্ত্রী রাধা রানীর যৌনাঙ্গে ব্যাথা রয়েছে। এছাড়াও স্কুল শিক্ষার্থী সুর্বনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা জখম রয়েছে।
তাঁরা জানান, বলাই কর্মকার শারিরীক অসুস্থতার কারণে বেকার, তাঁর স্ত্রী রাধা রানী কর্মকার বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তাদের মেয়ে সুর্বণা কলাবাগান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। এইর পরিবার মোবাইল চুরি করতে পারে না। তাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ক্ষমতার জোর দেখিয়ে রাসেল ও তাঁর স্ত্রী তাদের মারধর করেছে।
নির্যাতিত গৃহ পরিচালিকার স্বামী বলাই কর্মকার জানান, ঝালকাঠির শহরের কাঠপট্টি কলাবাগান এলাকায় স্থানীয় সোহবার হোসেনের ছেলে ব্যবসায়ী নাজমুল হক রাসেলের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন স্ত্রী রাধারানী। মাত্র ৭০০ টাকা বেতন দেয়ায় ১৫ দিন আগে কাজটি ছেড়ে দেন। এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার। শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে মোবাইল ফোন চুরির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নাজমুল হক রাসেল ও তার স্ত্রী জেবিন রাধা রানীকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। তার গোপনাঙ্গেও আঘাত করেন রাসেলের স্ত্রী জেবিন। রাসেলের স্বামী আমার দশ বছরের মেয়ে সুবর্ণা কর্মকারকেও মারধর করেন। গত ৪ দিন ধরে এভাবে নির্যাতন করেছেন।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার বলেন, স্কুলছাত্রীসহ একই পরিবারের তিনজনকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে রাধা রানীর যৌণাঙ্গেও আঘাত করা হয়েছে। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন সরকার বলেন, নির্যাতনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
