নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন: কোন অপরাধে কী সাজা?


বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বাদ দিয়ে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনে সাজা কমিয়ে অনেকগুলো অজামিনযোগ্য ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
মানহানি মামলার জন্য কারাদ-ের বিধান বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মানহানির অভিযোগে মামলা হলে গ্রেপ্তার করা হয় না।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনে কী কী আছে এবং কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত ও পরিবর্তন করে নতুন আইন করা হচ্ছে এবং কবে নতুন আইনটি সংসদে উঠবে, তা জানান আইনমন্ত্রী। তবে মন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না বলে পরিবর্তন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেসব ধারা প্রস্তাবিত আইনেও একইভাবে রাখা হয়েছে। তবে অনেকগুলো ধারা, যেমন মানহানির ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারা-। নতুন প্রস্তাবিত এ আইনে তা পরিবর্তন করে করা হয়েছে জরিমানা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়ে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দ-বিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সে জন্য তিনি অনধিক তিন বছর কারাদ- বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। যদি কেউ উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক পাঁচ বছর কারাদ- বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের জন্য কারা- বাদ দিলেও জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, জরিমানা না দিলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদ- দেওয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি হলো জরিমানা।
তিনি আরো বলেন, নুতন আইনে অনেকগুলো ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ছিল।
বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তি কমানো হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা-২১-এর কথা উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই ধারায় (২১) মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার জন্য দ-ের বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদ-ে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, এই সাজা কমিয়ে এখন করা হয়েছে সাত বছর। এ ছাড়া অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধের জন্য সাজা দ্বিগুণ বা সাজা বাড়ানো ছিল। প্রস্তাবিত আইনে প্রত্যেকটি ধারায় যেখানে দ্বিতীয়বার অপরাধের ক্ষেত্রে বাড়তি সাজার কথা আছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা ২৮ ধারা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে এই ব্যক্তির এই কাজ হবে একটি অপরাধ।
কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ সংঘটন করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর কারাদ-ে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। আর এই অপরাধ দ্বিতীয় বার করলে সাজা আরও বেশি হবে।
আরজেএন
