মুচির কাজ করে ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করিয়ে চাকরি করাতে পারলাম না
আমাদের ৬ সদস্যের সংসার ছিলো। তাই বাবার একার আয়ে সংসার চলতো না। যখন তৃতীয় শ্রেণিতে ছিলাম তখন থেকেই মুচির কাজ শুরু করে সংসারে বাবার সাথে হাল ধরি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মুচির কাজ করে আসছি।
আর এই মুচির কাজ করে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। কিন্তু এত কষ্ট করে লেখাপড়া করানোর পরে তিনটা ছেলে ও একটা মেয়ে তাদের মধ্যে একজনকেও চাকরি করাতে পারলাম না। অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও কোথাও তারা চাকরি পায়নি।
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন নলছিটি উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুচির কাজ করা কালাচাঁন ঋষি (৬৫)। তিনি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাধেশ্যাম ঋষির ছেলে।
কালাচাঁন ঋষি বলেন, আমি শুরু থেকে প্রায় ১২ বছর লঞ্চে ও স্টিমারে মুচির কাজ করেছি।এরপর পিরোজপুরের পাড়ের হাট এলাকায় ১১ বছর এরপর থেকে ঝালকাঠির নলছিটিতেই কাজ করে আসছি।
আমার কষ্টের টাকায় বড় ছেলেকে এসএসসি, মেজো ছেলেকে এইচএসসি ও ছোট ছেলে অনার্স ও মেয়েটা মাস্টার্সে পড়ে। তারা চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কোথাও কোন চাকরি পাইনি। আমাদের মামুখালু না থাকা চাকরি জোটেনি।
তিনি আরও বলেন, কোন চাকরি না পেয়ে বর্তমানে আমার তিন ছেলেই পৌরসভার মার্কেটে জুতার দোকান দিয়েছে। কিন্তু যদি একটা ছেলেও চাকরি পাইতো তাহলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।
কালা চাঁন আরও বলেন, আমার বাবার যা জমি ছিলো সেগুলো বিক্রি করে ১৯৭১ সালে সবাই ভারত চলে গেছিলাম।
কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনমাসের মতো থেকে আবার দেশেই ফিরে এসেছি। পরে এই মুচির কাজ করেই ১২ শতাংশ জমি ও থাকার জন্য ঘর তৈরি করেছি। এছাড়া একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।
আমার প্রতিদিন ১০০০থেকে ১৪০০ টাকা আয় হয়।প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারি। আমি যতদিন সুস্থ থাকবো আমার বাপদাদার এই পেশাকে ধরে রাখবো।
জুতা মেরামত করতে আসা বাপ্পি গাজী বলেন,সব কাজেরই একটা অভিজ্ঞতা লাগে। আর এই চাচা যেহেতু দীর্ঘদিন জুতা মেরামতের কাজ করে এরজন্য তার কাজ ভালো হয়। বিশেষ করে তার জুতা পালিশ খুবই ভালো হয়। এছাড়াও তিনি ব্যাগ, ছাতা মেরামতও খুব ভালোভাবে করে থাকেন।
পৌর মার্কেটের ব্যবসায়ী খান বশির জানান, দীর্ঘদিন থেকেই কালাচাঁন চাচাকে এখানে কাজ করতে দেখছি। প্রতিদিন জুতা মেরামতের সরঞ্জাম নিয়ে মার্কেটের সামনে ছোট চৌকির ওপর বসে শুরু করেন কাজ।
এই মার্কেটের মধ্যেই তার তিন ছেলের জুতার দোকান আছে। ৬৫ বছর বয়সে কাজ করে এটা দেখে ভালো লাগলো।
নলছিটি পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী বলেন, কালাচাঁন আমার ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তার বাপ দাদারা এই মুচির কাজ করেছেন। আর এই পেশাটাকে তিনি ধরে রেখেছেন। তিনি খুবই পরিশ্রমী। নিয়মিত মার্কেটের সামনে এসে কাজ করে।
আরিফুর রহমান, নলছিটি