তিন মাস পর ৩০ জানুয়ারি আবারও রাজপথে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরব বিএনপিকে অক্টোবরের পর আর রাজপথে তেমন দেখা যায়নি। বিক্ষিপ্ত কিছু ঝটিকা মিছিল আর হরতাল-অবরোধ-সহিংসতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছিল দলটির রাজনীতি। তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) কালো পতাকা হাতে আবারও রাজপথে দেখা মিলল নেতাকর্মীদের।
অন্যদিকে দলটির যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ করেছে। এর মধ্যদিয়ে বহুদিন পর রাজপথে দুই বড় দলের আবারও মুখোমুখি অবস্থান দেখলো জনগণ।সরকার পতনের আন্দোলনের ২০২২ সালের শেষের দিক থেকে রাজপথের কর্মসূচিতে বেশি সোচ্চার হয় বিএনপি। ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি সমাবেশের পর সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে ওই বছর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকেই মূলত বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনে সরব হয়।
এরপর ২০২৩ সালে বেশ কিছু মহাসমাবেশ করে দলটি। তবে বিএনপির ডাকা ২৮ আক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের রাজপথ। বিএনপির সেই সমাবেশ পণ্ড হলে লাগাতার কয়েক দফা হরতাল এবং অবরোধ ডেকে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে নামে দলটি।
রাজপথে ব্যাপক সংঘর্ষ-সহিংসতা ও পুলিশ সদস্য হত্যার জেরে বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর সহিংসতায় ফেরে বিএনপি। এই সহিংসতা অব্যাহত থাকে নির্বাচন পর্যন্ত। নির্বাচন বানচালের সব ধরনের অপচেষ্টা চালায় দলটি। তবে ২৮ অক্টোবরের পর রাজপথে দলটির নেতাকর্মীদের তেমন দেখা যায়নি। তবে দীর্ঘ তিন মাস পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি, নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং তাদের ভাষায় অবৈধ সংসদ বাতিলের দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করে দলটি।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে বিএনপির নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ মিছিল শুরু হয়। এতে দলটির হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন।
মিছিল ঘিরে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিট থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে কালো পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা দেয়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন।
কালো পতাকা মিছিলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দাবি করেন, বর্তমান সরকার জনগণ নয়, চীন, রাশিয়া ভারতের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছে। এসময় তিনি আগামী ৩০ জানুয়ারি সারাদেশে আবারও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গয়েশ্বর দাবি করেন, ‘চাপ প্রয়োগ করেও জনগণকে নির্বাচনে নিতে পারেনি সরকার। ৭ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে। ৯৩ ভাগ মানুষ বিএনপির পক্ষে, এটা প্রমানিত। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জনগণ কয়েক ক্লাস নিচে নামিয়ে দিয়েছে।’
দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন শুরু জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নিজেদের নেতাকর্মীরাও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি। সাহস থাকেতো চীন, রাশিয়া, ভারতের ক্যানভাসার বাদ দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখেন কত পারসেন্ট ভোট পায় আওয়ামী লীগ। সংবিধান রক্ষার নয়, সরকারের লুটপাট, দুর্নীতি আর পাচারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন শুরু হলো। বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরবে জনগণ।’
এদিকে দীর্ঘ ৯০ দিন পর আবারও রাজপথে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। একদিকে তাদের ভাষায় অবৈধ সংসদ বাতিলের দাবিতে নয়াপল্টনে কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপি। অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনে বড় বিজয়ের পরেও আন্দোলনের মাঠে বিরোধীদের কোনো ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। যে কোনো মূল্যে রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা কর্মসূচি নিয়ে পাহারায় ক্ষমতাসীনরা। এরই অংশ হিসাবে বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের দিনে রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করেছেন তারা।
শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, চীন-ভারত-রাশিয়া বন্ধু হলেও কোনো বিদেশি শক্তি তাদের ক্ষমতায় বসায়নি, দেশের মানুষের বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কালো পতাকা মানে শোকের মিছিল। এ আরেক ভুয়া। ৩০ তারিখে আবার ডাকছে, সেটাও ভুয়া। লন্ডনের তারেকে আর আস্থা নেই। নেতাকর্মীরা এখন আর তারেকের ফরমায়েশে কান দেয় না। ৩০ তারিখ সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবেন। পাহারায় থাকবেন।’
রাজপথে ফের বিএনপির সরব উপস্থিতি বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশের পর বিভিন্নভাবে বিএনপি বিতর্কিত হয়েছে। দলটিকে একঘরে করারও চেষ্টা করেছে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি কিছুটা ব্যাকফুটে থাকলেও তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে গেলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
এমএন