ঢাকা রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news
ভারত মহাসাগড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই

বিয়ের বছর না যেতেই স্বামী হারানোর শঙ্কায় নববধূ লিয়ামনি

বিয়ের বছর না যেতেই স্বামী হারানোর শঙ্কায় নববধূ লিয়ামনি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বিয়ের দুই মাসের মাথায় নববিবাহিতা স্ত্রীকে রেখে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক (ওয়েলার) হিসেবে যোগদান করেছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার মোহাম্মদ আলী হোসেন (২৬)। বলেছিলেন, আগামী কোরবানীর ছুটিতে বাড়ি আসবেন তিনি। কিন্তু অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে তাঁর ফিরে আসা।
গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া কয়লাবাহী জাহাজে জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের মধ্যে একজন বানারীপাড়ার সন্তান আলী হোসেন। এ খবরে আলী হোসেনের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা এবং নববধূসহ স্বজনদের মধ্যে চলছে কান্নার রোল।


পরিবারের ছোট ছেলে আলী হোসেনকে ফিরে পেতে তাঁর স্মৃতি টেনে বিলাপ করছেন তার বৃদ্ধ বাবা এবং মা। আর মুক্তিপনের জন্য স্বামীর বিপদে থাকার খবরে গুমড়ে কাঁদছেন তার নববিবাহিত স্ত্রী ইয়ামনী। তাঁরা অক্ষাত অবস্থায় আলী হোসেনকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি।
মোহাম্মদ আলী হোসেনের বাবা ইমাম হোসেন মল্লিক জানান, ‘সবশেষ গত মঙ্গলবার বেলা ৩টায় আলী ফোন করে জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানিয়ে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবার ফোন করে জানায়, এটাই হয়তো শেষ কথা। জলদস্যুরা নাবিকদের কেবিনে আটকে রেখে মোবাইলগুলো নিয়ে গেছে। বেঁচে ফিরলে আবার কথা হবে। তখন জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে যাচ্ছিল। এরপর থেকেই বন্ধ আলীর মোবাইল নম্বর। ছেলে কোথায় কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আলীর পরিবার।


বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের পশ্চিম উমারের পাড় গ্রামে জন্ম মোহাম্মদ আলীর। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী আলী কুমাড়ের পাড় বিশারীকান্দি সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে চার বছরের কোর্সে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জের মেরিন অ্যাকাডেমিতে। সেখানে চার বছর পড়ালেখা শেষ করে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ২০২০ সালে চাকরিতে যোগদান করেন আলী। এরপর গত প্রায় ১০ মাস আগে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার মেয়ে ইয়ামনিকে বিয়ে করেন তিনি।


সবশেষ গত দুই মাস আগে কেএসআর এম শিপিং লি. এর নিজস্ব খরচে সাউথ কোরিয়াতে গিয়ে এম ভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজে নাবিক হিসেবে কাজ শুরু করেন আলী। গত মঙ্গলবার সাউথ আফ্রিকা থেকে কয়লা বোঝাই করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল জাহাজটি। মাঝ পথে ভারত মহাসাগড়ে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি।


আলীর মা নামিমা পারভিন জানান, কুরবানির ঈদে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে এসে একসঙ্গে কুরবানি দেওয়ার কথা ছিলো আলীর। এমন অঘটনে সেই স্বপ্ন পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আলী যে জাহাজে চাকরি করে সেই কোম্পানী থেকে ফোন করে আমাদের শান্তনা দেয়া হয়েছে। আলীসহ অবরুদ্ধ সকল নাবিকদের মুক্তিতে সরকারিভাবে কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে আমাদের।


আলীর পরিবার জানিয়েছে, ‘যে জাহাজটি ছিনতাই হয়েছে ওই কোম্পানীতেই আলীর প্রথম চাকরি। আগেও দু’বার জাহাজে বিদেশ গিয়েছিলো সে। এটা ছিলো তাঁর তৃতীয় বার সমুদ্রযাত্রা। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট আলী হোসেনের আরেক ভাই জুলফিকার চাকরি করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। দুই ভাই, বাবা, মা, ভাবি আর স্ত্রীকে নিয়েই আলীর সংসার।


আলী হোসেনের স্ত্রী ইয়ামনি জানান, ‘আগামী কুরবানির ঈদে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল আলীর। পরিকল্পনা ছিল দুজন মিলে ঈদের ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাবেন। এমন ঘটনা ঘটবে তা কখনোই ভাবিনি। এখন স্বামীকে ফেরত পাওয়া ছাড়া আর কিছুই চান না তিনি। 


বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শান্ত জানান, আলীর পরিবারের পাশে থেকে সব ধরণের সহায়তা করছেন তারা। তাকে উদ্ধারে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা চাই যতদ্রæত সম্ভব সরকার এবং সংশ্লিষ্ট জাহাজ কোম্পানির যেন অবরুদ্ধ আলী হোসেনসহ সকল নাবিকদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনে।


প্রসঙ্গত: বাংলাদেশি মালিকানাধীন সমুদ্রগামী এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার সময় এডেন উপসাগরে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় জলদস্যুরা। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে এ জাহাজটি আক্রান্ত হয়। তাদের অনেকের হাতে অস্ত্র রয়েছে। সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে সমুদ্রে প্রায় ১০০ দস্যূ জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে নাবিকেরা নিরাপদে রয়েছেন। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।


এমএন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন