ঢাকা বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

লালমোহনে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করছে, ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা

 লালমোহনে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করছে, ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরম। এই গরমে একটু স্বস্তি পেতে প্রশান্তির বাতাস খোঁজেন মানুষজন। যাদের বাসা-বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ রয়েছে তারা গরম থেকে রক্ষা পেতে চালাচ্ছেন ফ্যান বা এসি। 

তবে ভোলার লালমোহন উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরে পল্লী বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর এখন পর্যন্ত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত করা হয়েছে, ওইসব এলাকায় এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে লোডশেডিং।  প্রতি ঘন্টায় ২-৩ বার আসা-যাওয়া করছে বিদ্যুৎ। 

বিদ্যুতের পরিস্থিতি এখন এমন, যেন বিদ্যুৎ এই আসে, এই যায়। এতে গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে অনেক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিচ্ছেন।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে গত শনিবার থেকে লালমোহন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর রোববার থেকে সোমবার চলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব। 

ওই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লালমোহনের বেশ কিছু এলাকা। ক্ষতি হয় পল্লী বিদুতেরও। লালমোহন উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৮৭ হাজার ৯৯২ জন।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর লালমোহনের যেসব এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ যায়নি তার মধ্যে রয়েছে, কালমা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লেজ ছকিনা এলাকার আজিম উদ্দিন বাড়ি, দফাদার বাড়ি, ডাকাত বাড়ি, ছলিম উদ্দিন বাড়ি। বদরপুর ইউনিয়নের হাজীর হাট বাজারের পূর্ব পাশে এবং মুসলিম বাজারের পাশের এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। 

লালমোহন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালের পশ্চিম পাশ, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী ও বিচ্ছিন্ন চর কচুয়াখালীতেও এখনো বিদ্যুৎ চালু হয়নি। এছাড়া লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদপুর এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকাতে পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ। 

উপজেলার কালমা ইউনিয়নের এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ না পাওয়া গ্রাহক নূরমোহাম্মদ জানান, প্রায় ৮দিন ধরে এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এতে ফ্রিজের সকল খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। পানির মোটর চালু করা যাচ্ছে না। শিশুদের পড়ালেখাও মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে।

লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ফরিদ বলেন, ভ্যাপসা গরম পড়ছে। যার কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাইরে বসে থাকি। এছাড়া উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের মঙ্গলসিকদার বাজারের ব্যবসায়ী দিপক, চতলা বাজারের ছালাউদ্দিন, পাটওয়ারির হাটের বাবুলসহ কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহক বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি চলছে। 

এই আসে তো এই চলে যায়। এতে করে প্রায় সকল গ্রাহকই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আমরা এই সমস্যা দ্রুত সমাধাণের দাবি করছি।

এদিকে লালমোহন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। পল্লী বিদ্যুৎ লালমোহন জোনাল অফিসের এজিএম সোয়েব ইবনে বাশার জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লালমোহনে বিদ্যুতের এক হাজার তার ছিঁড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে গেছে ১৬ টির মতো বিদ্যুতের খুঁটি। 

আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিন-রাত কাজ করে বিদ্যুতের লাইন মেরামত করছে। মেইন লাইনের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া সাইড লাইনগুলোর কাজও প্রায় শেষ। 

তবে বিভিন্ন এলাকার দুই-একটি বাড়িতে এখনো বিদ্যুৎ যায়নি। আমাদের কর্মীরা ওইসব বাড়ি বা এলাকাতে এখনো লাইন সচল করতে কাজ করছেন। আশা করছি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
চলমান লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের লালমোহন জোনাল অফিসের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, লোডশেডিং নিয়ে অনেক গ্রাহকের একটি ভুল ধারণা রয়েছে। গ্রাহকরা বলছেন, ভোলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, অথচ ভোলার মানুষই ঠিকমতো বিদ্যুৎ পান না। 

আমরা তো কেবল সরবরাহকারী। মূল বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে পিডিবি, তাদের কাছ থেকে নিচ্ছে পিজিসিবি। ওই পিজিসিবি সারাদেশের ন্যায় আমাদেরও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আমাদের স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় চাহিদার তুলানায় পিজিসিবি যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ করে, সে পরিমাণ লোডশেডিং দেওয়া হয়। 

এটা দিতে আমরা একপ্রকার বাধ্য হচ্ছি। তবে এ লোডশেডিং সব সময় হয় না। রাত ৯টার পর থেকে ১২ টা পর্যন্ত গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। তাই লোড হিসেব করে ওই সময় কিছু কিছু এলাকায় লোডশেডিং দেওয়া হয়।

চাহিদা অনুযায়ী পিজিসিবি আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ না করলে আমাদের লোডশেডিং দেওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু করার নেই। আমরা কখনই গ্রাহকদের দুর্ভোগ হোক তা চাই না।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন