লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ, নিখোঁজ সেই ছাত্রদল নেত্রীর মরদেহ উদ্ধার


ভোলায় ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে মেঘনা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়ার ৪ দিন পর ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতার মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌপুলিশ।
রোববার (২২ জুন) নিহত সুকর্ণার বাবা মাসুদ রানা লক্ষ্মীপুর গিয়ে তার মেয়ের পোশাক দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন। সোমবার (২৩ জুন) এ বিষয়ে তিনি মামলা করবেন বলে জানান।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) রাতে লক্ষ্মীপুর সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুকর্ণা আক্তার ওরফে ইস্পিতা ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্য হিসাবে নতুন কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদিকা পদের জন্য ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি পৌরসভার কলেজ রোডে।
এদিকে মরদেহ উদ্ধার ও পুলিশের হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বিষয়টি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) তাকে হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন কথা চলছে। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে জেলা ছাত্রদলের এক নেতাসহ কয়েকজনকে জড়িয়ে নানা মুখরোচক খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ নিয়ে নিশ্চিত করে পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।
ভোলা সদর থানা পুলিশ ও লঞ্চ স্টাফদের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন সকাল ১০টায় ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে এমভি কর্ণফুলী- ৪ লঞ্চে ঢাকায় রওয়ানা হন সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতা। মাঝপথে মেঘনায় ঝাঁপ দেন তিনি। এ ঘটনার চারদিন পর শনিবার লক্ষ্মীপুর থানার মেঘনা নদী থেকে সুকর্ণার মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ।
মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে অজ্ঞাত হিসাবে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় নৌপুলিশের এসআই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় কাউকে চিহ্নিত আসামি করা হয়নি। এদিকে খবর পেয়ে ২২ জুন সুকর্ণার বাবা মাসুদ রানা লক্ষ্মীপুর গিয়ে তার মেয়ের পোশাক দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন।
এ বিষয়ে নিহতের বাবা মাসুদ রানা জানান, তিনি এখনও লক্ষ্মীপুর অবস্থান করছেন। সেখান থেকে মেয়ের মরদেহ আর ভোলায় আনবেন না। মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বাদী হয়ে যে হত্যা মামলা করেছে তার সঙ্গে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দেবেন। অভিযোগটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সোমবার রাতের মধ্যেই অভিযোগটি থানায় দাখিল করবেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। দাখিল করার পর এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে জানাবেন বলে জানান।
ভোলা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু শাহাদৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানান, সুকর্ণা নিখোঁজ হন ১৭ জুন। তার বাবা ২০ জুন থানায় জিডি করেন। জিডিতে উল্লেখ্য করা হয় প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হন তার মেয়ে। লঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়া মেয়েটি যে সুকর্ণা এ বিষয়টি তখনও তার বাবা জানতেন না।
কর্ণফুলী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন জানান, তাদের লঞ্চ ১৭ জুন সকাল ১০টায় ইলিশা ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ার পরপরই সুকর্ণা জসিম নামে একজনের রেফারেন্সে একটি কেবিন নিতে চান। কিন্তু তার সঙ্গে ভাড়ার প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় ও জসিম অপরিচিত হওয়ায় ইনচার্জ তাকে কেবিন দেননি। পরে তিনি স্বেচ্ছায় ডেকে চলে যান।
তিনি আরও জানান, কালীগঞ্জের পর মেঘনার মাঝের চর এলাকায় লঞ্চটি পৌঁছার পর তিন তলা থেকে একজন নদীতে ঝাঁপ দেন। অন্য যাত্রীদের ডাক চিৎকারে খবর পেয়ে লঞ্চ স্টাফরা সেখানে ৪৫ মিনিট চেষ্টা করেও সন্ধান করতে পারেননি। পরবর্তীতে বিষয়টি কোস্টগার্ডকে জানালে তারা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন।
এ দিকে লঞ্চের এক যাত্রী বিষয়টি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ জানানোর পর মুন্সীগঞ্জের পুলিশ লঞ্চটি আটক করে দুই স্টাফ ও দুই যাত্রীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি নিশ্চিত হন।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মোন্নাফ জানান, নৌপুলিশের এসআই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে করা হত্যা মামলাটি তারা তদন্ত করছেন।
লঞ্চ মালিকের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ওইদিনের (১৭ জুনের) কয়েক জন যাত্রীর বক্তব্যেও সুকর্ণা লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেয়ার বিষয়টি জানা যায়।
যাত্রী মো. সাগর, স্বপনসহ কয়েকজন জানান, এক নারী যাত্রীকে তারা লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী মোবাইলে কথা বলতে বলতে ওই নারী লঞ্চের তিন তলার রেলিংয়ের কাছে আসেন। সঙ্গে থাকা ব্যাগের মধ্যে মোবাইল ফোনটি রেখে তিনি ঝাঁপ দেন। ওইসময় অন্য এক যাত্রী মোবাইলসহ ব্যাগটি নিয়ে যান।
এইচকেআর
