শাটডাউনে লকডাউন বরিশাল নগরী


সোমবার থেকে সারাদেশে শাটডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এই শাটডাউনেন মধ্যে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনে থাকবে বরিশাল সিটি। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী ৩০ জুন থেকে সাত দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
পাশাপাশি ২৬ জুন বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে শনিবার সকালে বরিশাল থেকে কোন যাত্রীবাহী পরিবহন খুলনায় যায়নি। এমনকি খুলনা থেকেও কোন যাত্রীবাহী পরিবহন বরিশাল অঞ্চলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
এদিকে, লকডাউন কার্যকর করতে জনগণকে সম্পৃক্তকরণ সভা করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকাল ৪টায় বরিশাল ক্লাবের হল রুমে শুরু হওয়া সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
এ সভায় লকডাউন কার্যকরে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা এবং অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে নগর কর্তৃপক্ষ।
লকডাউন কার্যকরে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- লাকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য বরিশাল ক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করা হবে, জনসাধারণ যাতে ঘর থেকে মাস্ক ছাড়া বাহিরে বের না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দূরপাল্লার গাড়িসহ অন্য জেলা থেকে যানবাহন যাতে বরিশালে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, হোটেল/রেস্তোঁরায় খাবার বসে না খাওয়া নিশ্চিত করা, সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের বিষয়ে অনুরোধ করাসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বরিশালের সকল বিনোদন কেন্দ্রসহ পাবলিক প্লেসসমূহ বন্ধ রাখা, সড়ক পথের পাশাপাশি নৌ-পথেও সকল যাত্রীবাহী নৌ-যান চলাচল বন্ধ রাখা, কোন মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে তার জন্য ব্যবসায়ীদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শনী, লিফলেট বিতরণ, মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে মুসল্লিদের অবহিতকরণসহ ক্যাবেল নেটওয়ার্কিং এর সাহায্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো’র সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শনিবার বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘জনগণকে সম্পৃক্তকরণ সভায়’ উল্লেখিত সিদ্ধান্তের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা এবং পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। এসময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম জাহাঙ্গীর ও বিসিসি’র প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ নগরীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ইমাম সমাজ, এনজিও প্রতিনিধি এবং সচেতনমহলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বরিশালের ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্যরা ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করেন।
সভায় বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় এ হার ৩০-৩৫ শতাংশ। এ কারণে বরিশাল সিটি এলাকা লকডাউন জরুরি।
তিনি বলেছেন, ‘লকডাউন কার্যকর করতে পূর্বের মত করেই বরিশাল জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট টিম নিয়মিত কাজ করবে। ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা হলে বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি যেসব নির্দেশনা আসবে সে মতেই জেলা প্রশাসন কাজ করবে।
অপরদিকে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরুতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে দায়িত্বের বাইরে গিয়েও মানবতার স্বার্থে কাজ করেছে। আসন্ন লকডাউনেও পুলিশ একই ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে বরিশাল মহানগরী এলাকায় প্রবেশের যেসব পথ রয়েছে সেসব প্রবেশদ্বারে পুলিশের চেক পোস্ট বসানো হবে। বিনোদন কেন্দ্র এবং উন্মুক্ত স্থানগুলো বন্ধ রাখার বিষয়ে তদারকি করা সহ সরকারি নির্দেশনা মেনেই বাকি কার্যসম্পাদন করা হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেছেন, ‘খুলনা অঞ্চলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। খুলনা অঞ্চলের সাথে বরিশাল বিভাগের নিয়মিত সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তাই সংক্রমণের দিক থেকে কিছুটা নিরাপদে থাকা বরিশাল বিভাগে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বরিশাল এবং খুলনার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধের সুপারিশ করেছে। ওই সুপারিশের আলোকে ২৬ জুন থেকে বরিশাল থেকে খুলনা এবং খুলনা থেকে বরিশালে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘করোনা মহামারিতে সারা দেশ যখন লকডাউনে ছিল তখন আমরা বরিশাল সিটিতে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তখন আমরা রাতের আঁধারে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘জনস্বার্থে আগামী ৩০ জুন থেকে পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়েও অসহায় এবং দুস্থ মানুষের পাশে থাকবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। তাদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত কিংবা অন্যান্য গুরুতর অসুস্থ রোগীদের তাৎক্ষণিক সেবায় ৫টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাছাড়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীরা যাতে দ্রুত চিকিৎসা সেবা পান সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে কি চলবে এবং কি চলবে না’ সে বিষয়টি রোববার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। সাত দিন পরে পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ।
এমবি
