রোগীর শরীরে ‘এ’ পজেটিভের পরিবর্তে পুশ করা হলো ‘ও’ পজেটিভ রক্ত


হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের অসাবধানতায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছেন লোকমান হোসেন নামের একজন রোগী। রোগীর শরীরে রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত ‘এ’ পজেটিভের পরিবর্তে ‘ও’ পজেটিভ রক্ত পুশ করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবস্থা সংকটপন্ন হয়ে পড়লে ওই রোগীকে দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে। তবে ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও লিখিত অভিযোগের অজুহাতে এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভুল চিকিৎসার শিকার রোগী লোকমান হোসেন ঝালকাঠি’র কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া গ্রামের মুনসুর খানের ছেলে। বর্তমানে তিনি শেবাচিম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তার মেয়ে রিয়া মনি।
তিনি জানান, ‘২৩ জুন জুন তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে তাকে শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরে রক্ত শূন্যতার কারণে দ্রুত রোগীর শরীরে গ্রুপ অনুযায়ী ‘এ’ পজেটিভ রক্ত দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
তিনি জানান, ‘রক্ত সরবরাহ করে হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানকার ফ্রিজে রাখা হয়। পরবর্তীতে ২৪ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওই রক্ত এনে রোগীর শরীরে পুশ করেন দায়িত্বরত নার্স। কিছু সময় পরেই রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে স্বজনরা নিশ্চিত হন ‘এ’ পজেটিভের পরিবর্তে ‘ও’ পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে রোগীর শরীরে।
এদিকে, ‘অন্য রক্ত শরীরে যাওয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগী লোকমান হোসেন। চিকিৎসকের পরামর্শে দ্রুত তাকে হাসপাতালের নিবির পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই ইউনিটে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তার মেয়ে।
ভুল চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট মেডিসিন ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র এবং দায়িত্বরত নার্সদের ভুলের কারণেই এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এটার জন্য রোগীর স্বজনরাও দায়ী। তারা রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র থেকে প্রেরিত কাগজের সাথে মিলিয়ে রক্ত গ্রহণ করেননি।
তারা আরও বলেন, ‘অন্য রক্ত শরীরে পুশ করার ফলে এ যাত্রায় ওই রোগী বেঁচে ফিরলেওমানসিক সমস্যাসহ শরীরের কোন অংশের মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে তার।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত দুদিন পূর্বে মুঠোফোনে আমি ঘটনাটি শুনেছি। কোন একজন লোক আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। আমি দ্রুত ওই রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তরসহ যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ভাগ্য ভালো যে শরীরে বেশী পরিমাণ রক্ত যাওয়ার আগেই বিষয়টি ধরা পড়েছে। আরও বেশি রক্ত শরীরে চলে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তবে বর্তমানে ওই রোগী শঙ্কামুক্ত আছেন।
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পরে রোগীর স্বজন কিংবা অন্য কেহ আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। এমনকি তারা মৌখিক বা লিখিতভাবেও কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ না পাওয়ায় এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমন একটি ভুল ধরা পড়ার পরে এটি তদন্ত করে দেখাটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। তবে কেউ কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তাই এ বিষয়ে তদন্ত কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি।
এমবি
