ঢাকা শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেলো

সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেলো
হত্যার পর প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে পালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা, পাশে নিহত সাংবাদিক তুহিন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যার আগ মুহূর্তের কিছু দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসিটিভিতে। তাতে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করছে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভিডিও করায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

স্থানীয় একটি দোকান থেকে পাওয়া সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে এমনটাই বলছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান।


নিহত তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তার পশ্চিম পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শাপলা ম্যানশনের সামনে। হঠাৎ কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন। এসময় পেছন থেকে নীল  শার্ট পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে টেনে ধরেন। কিন্তু নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড় থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে কয়েকজন যুবক (যাদের সবার হাতেই রামদা ও চাইনিজ কুড়াল রয়েছে) তাকে কোপানোর চেষ্টা করে। তখন ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান।

ঘটনার কিছু সময় আগে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সাংবাদিক তুহিন ও তার সহকর্মী মো. শামীম হোসেন।


ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীম বলেন, চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ঠিক এমন সময় এক নারী ও পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। তখন কয়েকজন লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি তোরে আয়’। এ সময় তারা রামদা বের করলে ওই লোকটা (যার ওপর ওদের টার্গেট ছিল) দৌড় দেয়।

শামীম আরও বলেন, ঠিক ওই সময় সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়। তখন আমার পাশ থেকে তুহিন মোবাইল নিয়ে ওদের পেছনে দৌড় দেন। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। ফলে আমি আর তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি, যারা রামদা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা হঠাৎ থেমে পেছন দিকে তাকায়।

তিনি আরও বলেন, তারা দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে। এসময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তখন তুহিন দৌড়ে চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগা মার্কেটের পূর্ব পাশে একটি দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও ওই দোকানে ঢুকে ওকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তখন আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।


এদিকে নারীর সঙ্গে যেই ব্যক্তির ঝামেলা হয়েছিল সেই ব্যক্তি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার নাম বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ওই মেয়েসহ একটা টিম আছে, ওরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে।

গোয়েন্দাদের বরাতে বাসন থানার পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তারা সবাই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে তিনিও তাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের একজন হচ্ছে মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট, অপর একজনের নাম সুজন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে তারা ছিনতাই করে থাকে। তবে এবার তারা ওই লোককে কেন কোপাতে গিয়েছিল সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পর থেকেই পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।

এদিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদশা মিয়া নেই। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।


গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, আমরা ধারণা করছি ওই মেয়েটিও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। যে লোকটাকে ধাওয়া করেছে তার সঙ্গে ছিনতাইকারীরা কিছু একটা করেছে। যার কারণে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে জখম করে ও ধাওয়া করে। ছিনতাইকারীদের ধরতে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন