দৈনিক গাঁজা সেবনে হাঁপানির ঝুঁকি বাড়ে ৪৪ শতাংশ: গবেষণা


এখন অনেক দেশেই বৈধ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে গাঁজা। অনেকে আবার সিগারেটের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে গাঁজা সেবন করছেন।
তবে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, শ্বাসের মাধ্যমে বিশেষ করে ধূমপান ও ভেপিংয়ের মাধ্যমে গাঁজা সেবন ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জার্নাল অফ জেনারেল ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ।
গবেষণাটি করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকো’র গবেষকদের একটি দল, যেখানে গাঁজা সেবন ও শ্বাসযন্ত্রের রোগের মধ্যে সম্পর্ক খতিয়ে দেখেছেন তারা।
গবেষণা দলটি বলছে, যারা প্রতিদিন শ্বাসের মাধ্যমে গাঁজা সেবন করেন তাদের হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৪ শতাংশ বেশি।
একই গবেষণায় উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ ‘সিওপিডি’ হওয়ার ঝুঁকিও ২৭ শতাংশ বেশি। তবে গবেষকরা বলছেন, প্রকৃত ঝুঁকি আরও বেশি হতে পারে। কারণ সিওপিডি রোগ সাধারণত বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।
গবেষণায় ‘শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ’ বলতে এমন যে কোনো পদ্ধতিকে বোঝানো হয়েছে, যার মাধ্যমে গাঁজার ধোঁয়া বা বাষ্প ফুসফুসে প্রবেশ করে। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ ধূমপান, ইলেকট্রনিক ভেপিং ও ড্যাবিং, যেখানে গাঁজার ঘন ভেপ বা বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করেন মানুষ।
তবে গুরুত্বপূর্ণভাবে এসব বাড়তি স্বাস্থ্যঝুঁকি এমন মানুষদের মধ্যেও দেখা গিয়েছে, যারা কখনো ধূমপান করেননি। তাদের জন্য এ গবেষণার ফলাফল বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গাঁজা শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণে হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫১ শতাংশ বেশি।
তবে তাদের সিওপিডি’তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির বৃদ্ধি পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও এ প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির ঝুঁকিকে নির্দেশ করছে।
গবেষণাটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পরিসরে করা গবেষণা, যেখানে গাঁজা শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ ও ফুসফুসের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা, এমনকি তাদের নিয়েও করেছেন যারা কখনো সিগারেট সেবন করেননি।
এ গবেষণায় প্রায় তিন লাখ ৮০ হাজার মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষণা দলটি। অংশগ্রহণকারীরা ‘বিহেভিয়ারাল রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম’ নামের এক জরিপে অংশ নিয়েছিলেন। এ জরিপটি পরিচালনা করেছে ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ ২২ হাজার জন বলেছেন, তারা কখনো ধূমপান করেননি, যা গাঁজার প্রভাব সিগারেট থেকে কীভাবে আলাদা তা ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে গবেষকদের।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাঁজাকে নিরাপদ মনে করার বাড়তে থাকা এমন ধারণা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। বহু বছর ধরে করা গবেষণা ও জনস্বাস্থ্য প্রচারণায় ধূমপানকে বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও গাঁজা সম্পর্কে এখনো ততটা বিস্তারিত গবেষণা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শহরে গাঁজার বৈধতা বাড়ার কারণে গবেষকরা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, অনেকেই ফুসফুসের সম্ভাব্য ঝুঁকিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকো’র সহকারী অধ্যাপক ড. অ্যালিসন রুস্তাগি বলেছেন, “সিগারেট ক্ষতিকর এই বার্তা সবাই জানেন। তবে গাঁজার ক্ষেত্রে বিষয়টি এতটা স্পষ্ট নয়।
“মানুষ যদি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে চান, তবে তাদের গাঁজা সেবন শুরু করা উচিত নয়। আর যারা এরইমধ্যে গাঁজা সেবন করেছেন তাদের তা কমিয়ে আনা উচিৎ।”
গবেষণায় বলা হয়নি যে, গাঁজার সব ধরনের সেবন সমানভাবে ক্ষতিকর। তবে প্রতিদিন শ্বাসের মাধ্যমে গাঁজা সেবনের ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে গবেষণাটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিগারেটের মতোই দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায় গাঁজা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাই হতে পারে মূল চাবিকাঠি।
