ভাঙন রোধে বদলে যাচ্ছে ঝালকাঠির নদীপাড়ের জীবনচিত্র

ঝালকাঠির বুক চিরে বয়ে যাওয়া সুগন্ধা নদী বহু বছর ধরে যেমন সৌন্দর্য ছড়িয়েছে, তেমনি প্রতি বর্ষায় ভয়াবহ ভাঙনের দুঃসহ স্মৃতি উপহার দিয়েছে নদীপাড়ের মানুষকে। বাড়িঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হওয়া, চাষের জমি হারানো আর প্রতিদিনের অনিশ্চয়তা যেন এক অদৃশ্য আতঙ্ক হয়ে ছিল এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে। সেই দীর্ঘ দুর্ভোগ কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন এখন বাস্তবের কাছে পৌঁছেছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের হাতে নেওয়া ‘“সুগন্ধা নদীর ভাংগন হতে ঝালকাঠরে সদর উপজলো ও নলছটি উপজলোর বিভিন্নি এলাকা রক্ষা” প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, যা নদীপাড়ের জনজীবনে নতুন আশার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।
প্রকল্প এলাকায় এখন প্রতিদিনই দেখা যায় শ্রমিকদের ব্যস্ততাময় সময়। নদীর তীরে স্থাপন করা হচ্ছে সুরক্ষাবাঁধ, জিও ব্যাগ, সিমেন্ট কংক্রিটের ব্লকসহ আধুনিক নদীশাসন কাঠামো।
কর্মকর্তারা জানান, ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন ১৩.২১৫ কিঃমিঃ নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ও দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নদীর স্রোতের ধরন, মাটির গঠন এবং ভাঙন প্রবণতার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব ব্যবস্থায় নদীর তীর দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
ইতোমধ্যে পরিবর্তনের ছোঁয়া টের পাচ্ছেন স্থানীয়রা। কয়েক মাস আগেও যারা ভয়ে নিজের বসতবাড়িতে বিনিয়োগ করতে পারছিলেন না, এখন তারা নতুন ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষকরা নিশ্চিন্তে আগাম মৌসুমের ফসল ফলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভাঙনের ভয় কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি এসেছে। নদীর পাড়ঘেঁষা জমির দামও বেড়েছে কয়েকগুণ, যা স্থানীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “সুগন্ধা নদীর ভাঙন রোধ শুধু একটি প্রকল্প নয়—এটি নদীপাড়ের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি স্বপ্ন। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে মানুষ আবাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আরেকটি নিরাপদ বাস্তবতায় প্রবেশ করবে।”
প্রকল্পকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি নিয়মিতভাবে কাজের গুণগত মান যাচাই করছে এবং নকশা (ডিজাইন) অনুযায়ী নির্মাণকার্য হচ্ছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ কারণে পুরো প্রকল্পটি নিরাপদ, মানসম্মত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই প্রকল্প শুধু ভাঙন ঠেকিয়ে মানুষের ঘরবাড়ি রক্ষাই করবে না; বরং ঝালকাঠির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন পথ খুলে দেবে। নদীপাড়কে কেন্দ্র করে তৈরি হবে নতুন বাজার, নতুন কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব বসতি।
সব মিলিয়ে, সুগন্ধা নদী সংরক্ষণ প্রকল্প এখন ঝালকাঠির মানুষের সামনে নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং উন্নয়নমুখী ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচিত করছে। প্রকল্পটি শেষ হলে সুগন্ধা নদীর তীর শুধু ভাঙনমুক্তই হবে না—এটি রূপ নেবে টেকসই উন্নয়নের এক অনন্য সম্ভাবনাময় অঞ্চলে।
এইচকেআর