মুলাদী পৌরসভার উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ


বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বরিশালের মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের। একের পর এক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসছে তারা। পূর্বের বিতর্ক না ঘুচতেই এবার পৌরসভার উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহমেদ জুয়েল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ইমাম। অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন না পেয়ে মুলাদী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, গত ২৫ জুন ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় মুলাদী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে সাড়ে ১৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বরগুনা জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজ জয়েন্ট ভেঞ্চারে মুলাদী পৌরসভায় কাজ শুরু করেন। ঠিকাদারের প্রতিনিধি রুবেল হোসেন জানান, গত ২৮ জুন সোমবার তাঁদের লোকজন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খানের বাড়ির সামনে পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করছিলেন।
ওই সময় জুবায়ের আহমেদ জুয়েল এবং মেহেদী হাসান ইমাম এসে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে সমন্বয় না করে একটি পাইপও স্থাপন করা যাবে না বলে স্রেফ জানিয়ে দেয়। ছাত্রলীগ নেতারা গত ২৯ জুন পুনঃরায় ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে গালিগালাজ করে প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত মালামাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে পৌরসভার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় ঠিকাদার কামাল হোসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ, বরিশাল র্যাব-৮ সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।
মুলাদী পৌরসভার মেয়র শফিকুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘ঠিকাদার আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য র্যাব, পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। তাছাড়া বিষয়টি বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকেও অবহিত করেছি। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক যেটা করেছি সেটা দুষ্টমি। উপজেলা ছাত্রলীগ বার বারই নষ্ট রাজনীতি করছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আহমেদ জুয়েল এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেদেহী হাসান ইমাম বলেন, ‘আমি উপজেলার সামনে ছিলাম। এসময় কাজ চলতে দেখে আমি কৈতুহলবসত দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে জিজ্ঞাসা করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মান ঠিক হচ্ছে কি-না তা জানতে চেয়েছেন।
ওয়ার্ক অর্ডারে কোন ধরনের পাইপ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা দেখতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান বসতে চেয়েছেন। এজন্য আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে কাগজপত্র দেখিয়ে কাজ শুরু করতে বলেছি। সামান্য এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন ধরনের অপপ্রচার চালালে সেটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসারমূলকভাবে করছে। আসলে যারা অভিযোগ করছে তারাই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
অপরদিকে, ‘মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস.এম মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কাজের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার রুবেল হোসেন এর সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন ছাত্রলীগ সভাপতির সাথে তার একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে এখন আর সমস্যা নেই বলে ইঞ্জিনিয়ার আমাকে নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অতটা অবগত নই। তবে মুলাদী কিছু একটা ঘটেছে বলে আঁচ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। এমনকি কোন প্রমাণও পাইনি। অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমবি
