লালমোহনে জেলেদের মাছ শিকারে বাঁধার অভিযোগ


ভোলার লালমোহনের মেঘনা নদীতে জেগে উঠা ৮নং নাম্বার ও বইস্যার চর এলাকার নদীর প্রায় ১৫/২০ কিলোমিটার জুড়ে খুঁটা জাল (খর্চি জাল) বসিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এবং ওই এলাকায় সাধারণ জেলেদেরকে মাছ শিকারে বাঁধা দেয়া হচ্ছে, এমন ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন জাহাঙ্গীর মিয়া নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার মেঘনা নদীর দুটি স্থান (ধলীগৌরনগর ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডস্থ কামার খাল ও বাত্তির খালের মাঝামাঝি) ৮নাম্বার চরের পূর্ব পাশে ও উড়ির চরের পশ্চিম পাশে প্রায় ৮/১০ কিলোমিটার এবং (লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের বুড়িরদোন ঘাট থেকে পূর্ব দক্ষিণে) বইস্যার চরের পূর্ব পাশে প্রায় ৯/১০ কিলোমিটার জায়গায় গাছ দিয়ে বাঁধের মত সৃষ্টি করে খূঁটা জাল বসিয়েছে প্রভাবশালীরা।
ওই স্থানে আগে উপজেলার প্রায় দুই হাজার নৌকা ও ট্রলারে প্রায় ৫/৭ হাজার সাধারণ জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে খুঁটি বসানোর পর প্রভাবশালীদের ভয়ে জেলেরা ওই স্থানে মাছ শিকার করতে পারছেনা।
তাই সাধারণ জেলেদের জীবন জীবিকার কথা চিন্তা করে অবৈধ ওই দখলমুক্ত করার দাবিতে জেলেদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিনে ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড় বাত্তির খাল এলাকার নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন জেলে জানায়, কামারের খাল ও বাতির খালের মাঝামাঝি মেঘনা নদীর মধ্যে, ৮ নং চরের পূর্ব পাশে, উরির চরের পশ্চিম পাশে, প্রায় ২০ কিলোমিটার নদীতে বাধের মত সৃষ্টি করে চরের কেওড়া গাছ পুতে খুটা/খর্চি জাল বসিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ধরে বাতির খাল মাছ ঘাটে ওপেন বিক্রি করা হচ্ছে। ঝাঁটকা থেকে শুরু করে ছোট বড় সকল ধরনের মাছ এমনকি রেনু পোনা পর্যন্ত এই খুটা/খর্চি জালে আটকা পরে এবং সেগুলোও বিক্রি করা হচ্ছে। এই খুটা/খর্চি জালের পরিধি সর্বোচ্চ আধা ইঞ্চি থেকে তার নিচে, যাহা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
জেলারা আরও জানান, এই খুটা/খর্চি জালের নেতৃত্বে রয়েছেন চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টু। তার সহয়োগী হচ্ছেন মনজু, ফারুক মেম্বার, টমেটু আলমগীর, আলাউদ্দিন মাঝি, ডাকাত জাহাঙ্গীর মাঝি সহ তার কয়েকজন সাংগপাঙ্গরা। এদের ম্যানেজার হিসাবে রয়েছেন ৪নং ওয়ার্ডের মিজান। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন চলছে এই অবৈধ মাছ ধরার মহাউৎসব। ফলে ঐ এলাকা থেকে সাধারন জেলেরা মাছ ধরা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম মিন্টুর মোবাইলে (০১৭৪... ..২৭২৯) এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য বারবার মোবাইলে রিং করলে তিনি রিসিভ করেননি তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লিখিত কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন লালমোহনের সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান। তবে উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় মৎস্য কর্মকর্তা বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানান তিনি।
এদিকে নদীর বিশাল এলাকা জুড়ে খুঁটা জালের বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা মৎস্য অফিসসহ প্রশাসনের সহায়তায় যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা হবে।
নদীতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকারের মাধ্যমে লালমোহনের হাজার হাজার সাধারণ জেলের জীবন জীবিকার জন্য মেঘনা নদী হোক উন্মুক্ত, এমনটাই প্রত্যাশা সচেতনমহলের।
এইচকেআর
