আগৈলঝাড়ায় শিকলে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতনের অভিযোগ

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দুলাভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হাতে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শিকলে বেঁধে নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণ বাগধা গ্রামে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগধা গ্রামের কাশেম খানের সাথে একই বাড়ির ইমদাদুল হক বাহাদুরের সাথে বাড়িতে প্রবেশের যাতায়াতের পথ নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি কাশেম খান বাড়িতে ঢোকার পথে বেড়া দিয়ে ইমদাদুলসহ কয়েকটি পরিবার সদস্যদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়।
ইমদাদুল হক বাহাদুর জানান, রোববার বিকেলে স্বরুপকাঠীর কাটাখালী থেকে তার বাড়িতে বেড়াতে আসে তার স্ত্রী শিল্পী বেগমের ছোট বোন পারভীন আক্তার, সুমি আক্তার ও ছোট ভাই শাহজালাল। উল্লেখিত তিন জনে প্রতিপক্ষ কাশেম খানের বাড়ির পাশ দিয়ে তাদের বাড়িতে ঢোকার সময়ে কাশেম খানের ছেলে ইলিয়াস খান ও তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম তাদের পথরোধ করে।
বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ইলিয়াস, তাঁর স্ত্রী রেখা, ইলিয়াসের ছেলে বেড়াতে আসা পারভীন আক্তারকে (২৮) পথ দিয়ে হেঁটে যাবার অপরাধে মারধর শুরু করে। মারধরর এক পর্যায়ে ইলিয়াসের পরিবারের লোকজন পারভীনকে প্রথমে রশি এবং পরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে বাড়ির একটি আমড়া গাছের সাথে দু’টি তালা দিয়ে আটকে রাখে।
মারধরের সময় পারভীনের বিবস্ত্র অবস্থার ছবি মোবাইল ফোনে তোলে ইলিয়াসের ছেলে আহাদ। মারধরের হাত থেকে পারভীনকে উদ্ধার করতে যাওয়ায় তার বোন সুমি ও ভাই শাহজালালকেও মারধর করে ইলিয়াসের লোকজন।
শিকলে বাঁধা অবস্থায় পারভীনের ডাক চিৎকারও প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রথমে কেউ এগিয়ে না আসলেও একপর্যায় গ্রাম পুলিশ সদস্য পরেশ দাস এবং স্থানীয় আবুল কালাম সরদার, আব্দুল হক ঢালী এগিয়ে আসলে তাদের প্রতিরোধের মুখে শিকলে বাঁধা পারভীনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ইলিয়াস। আহত পারভীনকে হাসপাতালে নিতেও প্রতিপক্ষের লোকজন বাঁধা দেয় বলে জানিয়েছেন পারভীন। এক পর্যায়ে সোমবার দুপুরে পারভীনকে তার স্বজনেরা অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আলআমিন হোসাইন জানান, আহত গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত ইলিয়াসকে না পাওয়ায় তার বড় ভাই সিরাজ খান সাংবাদিকদের কাছে শিকলে বেঁধে মারধরের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাড়িতে যাতায়াতের পথ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ইমদাদুলের সাথে বিরোধ চলছিল।
রোববার ওই পথ দিয়ে যাবার সময় ইমদাদুলের পরিবারের লোকজন আমাদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করে। বাগধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বলেন, শিকলে বেঁধে একজন গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও ভুক্তভোগী ইমদাদুল হক বাহাদুর জানান, এ ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই মনিরুজ্জামান বলেন, উভয়ের সাথে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের ছবি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ইলিয়াসের পক্ষের লোকজনও আহত হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, শিকলে বেঁধে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের খবর পেয়ে এসআই মনির হোসেনকে ঘটনাস্থল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিদর্শনে পাঠানো হয়। তারা এখনো থানায় কোন অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি ।
এইচকেআর