গরীবের ডাক্তার ক্যাপ্টেন সিরাজুল ইসলাম আর নেই

বরিশালের গরীবের ডাক্তার খ্যাত বরেণ্য চিকিৎসক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সিরাজুল ইসলাম আর নেই। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি বরিশালের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. খাদেম হোসেন এর ছেলে। ছয় ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে তিনিই সর্বজ্যেষ্ঠ। তাঁর একমাত্র পুত্র একজন চিকিৎসক এবং মেয়ে কানাডা প্রবাসী। এছাড়াও তিনি মৃত্যুকালে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বরেণ্য এই চিকিৎসকের মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মরহুমের মামাতো ভাই শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস.এম জাকির হোসেন জানিয়েছেন, ‘আজ শুক্রবার ৬ আগস্ট বাদ জুমা নগরীর গোরস্থান রোড আঞ্জুমান-ই-হেমায়েত-ই-ইসলামের সামনে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মুসলিম গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ‘গত ২৭ জুলাই দুপুরে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ডাক্তার সিরাজুল ইসলামকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
নগরীর জিয়া সড়ক এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সিরাজুল ইসলাম আমৃত্যু মানুষের সেবা দিয়ে গেছেন। দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর তিনি জিয়া সড়ক এবং হিজলা-মুলাদী উপজেলার মানুষকে নির্লোভ চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। যার সাধ্য আছে তার কাছ থেকেই কেবল ভিজিট রাখতেন। তাও নির্ধারিতভাবে নয়, যতটুকু সম্ভব ততটুকুই রেখেছেন। আর না দিলে নয়। কথিত রয়েছে ডা. সিরাজুল ইসলাম অসহায় এবং গরীব রোগীদের বিনা টাকায় চিকিৎসা দিয়েছেন। পাশাপাশি ওই রোগীর চিকিৎসা সহায়তার নিজের পকেটের টাকা দিয়েও ওষুধ কিনে দিতেন। এ কারণেই তিনি গরীবের ডাক্তার নামের খেতাব পান।
মরহুমের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন, ডা. সিরাজুল ইসলাম নগরীর জিয়া সড়ক ছাড়াও নগরীর সদর রোড অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে আজাদ অপটিকস্-এ চেম্বার করতেন। অসুস্থ হওয়ার দিনেও তিনি ২০ জন অসহায় এবং গরীব মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন। ওইদিন চিকিৎসা করতে গিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বরিশালের একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সিরাজুল ইসলাম বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের এ্যানাটমি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমান সময়ে বরিশালের অনেক সনামধন্য চিকিৎসক রয়েছেন, যারা ডা. সিরাজুল ইসলামের ছাত্র। তাঁকে বরিশাল অঞ্চলের আধুনিক চিকিৎসা সেবার রুপকারও বলা চলে।
মহামারী করোনার মধ্যে যখন বেশিরভাগ চিকিৎসক ভয়ে হাত-পা গুটিয়ে নেন, কিন্তু সেই মুহুর্তেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন প্রবীন চিকিৎসক ডা. সিরাজুল ইসলাম। তাই একজন নির্লোভ এবং পরোপকারী গরীবের চিকিৎসককে হারিয়ে বরিশালবাসী বড় অনেক বড় কিছু হারালেন বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক চিকিৎসক।
কেআর