নানা ও মামাশ্বশুরকে পাইপের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন


ঢাকার সাভারে নাতিজামাই বাড়িতে বেড়াতে এসে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নানাশ্বশুর ও মামাশ্বশুর। তাদের একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে পাইপের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে নাতিজামাই পরিবারের লোকজন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পূর্বে নাতনির অন্য কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল- এমন অপবাদে তাদের নির্যাতন করা হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুর কাজীপাড়া এলাকার বসির মহাজনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, বছরখানেক আগে সাভারের বনগাঁও ইউনিয়নের সাধাপুর কাজীপাড়া গ্রামের বসির মহাজনের ছেলে আবুল কালামের সঙ্গে সিংগাইর উপজেলার খাসেরচর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের কন্যা সোনিয়া আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সোনিয়া এখন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
নির্যাতনের শিকার আব্দুল মান্নানের ছেলে ফরিদুর রহমান জয় বলেন, বিয়ের দেড় মাস পর তার ভাগনির অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এমন মিথ্যা অপবাদ দিতে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে আমরা আমাদের ভাগনিকে আমাদের বাড়ি নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেই। এলাকাবাসী ও সোনিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অনুরোধে তাকে আবার শ্বশুরবাড়িতে পাঠাই। এরপর থেকে ভাগনির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। সোনিয়া ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় গত মঙ্গলবার আমার বাবা ও আমার ফুফাতো ভাই ভাগনিকে আনতে যান সাভারে। এরপর তাদের পাইপের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে।
ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নান (নানা) বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নাতনি সোনিয়াকে তার বাবার বাড়িতে আনার জন্য বুধবার দুপুরে সোনিয়ার স্বামীর বাড়িতে যাই। এরপর নাতিজামাই আবুল কালাম ও তার পরিবারের লোকজন সোনিয়ার বিয়ের পূর্বে কারো সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এমন অপবাদ দেয়। একপর্যায়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে পাইপের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে। নাতিজামাই এ নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তার অন্য মামাশ্বশুরের মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়। আমাদের উদ্ধার করতে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। একপর্যায়ে এমন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জাতীয় জরুরি নম্বরে ৯৯৯ ফোন করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমাদের উদ্ধার করে।
নির্যাতনের শিকার শহিদ মোল্লা (মামা) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের দেয়া একটি সাদা স্ট্যাম্পে দুইজনই স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই। এই স্বাক্ষর নিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি, আমরা ভাগনিকে এখান থেকে নিয়ে কাবিনের বাকি ১০ লাখ টাকা আদায়ের জন্য এখানে এসেছি- এমন মিথ্যা ভিডিও স্বীকারোক্তি আমাদের কাছ থেকে নেয়া হয়। এমনকি এ ঘটনা পুলিশে অভিযোগ করা হলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমাদের উদ্ধার করে।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল মান্নান বৃহস্পতিবার সকালে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত বশির মহাজন ও আবুল কালামকে আটক করা হয়েছে।
এইচেকআর
