যতবারই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে ততবারই পিতাকে মেরেছে ছেলে
জমি লোভী সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সত্তোরর্ধ অসহায় এক পিতা। বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধের নাম আনসার আলী। তিনি বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়ার নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা।
আনসার আলী বলেন, আমার ছেলের অন্যায়ের ঘটনায় যতবারই প্রতিবাদ করেছি, ততবারই আমার ছেলে আমাকে মারধর করেছে। আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। জেল থেকে বেড়িয়ে আবার হত্যার হুমকি দিয়েছে। আমার জমি দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। শেষে বাধ্য হয়ে নিজের ঘর ছেড়ে বড় ছেলের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। বৃদ্ধ আনসার বলেন, আমার মেঝ ছেলে আবুল কাশেম নান্নু কয়েক দফায় আমার ১০ লাখ টাকার গাছ ও বাঁশ বিক্রি করে নিয়ে যায়। এরপরে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শালিস হয়। তবে ওই শালিসের রায় মেঝো ছেলে নান্নু মেনে নেয়নি। ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি টাকা চেয়ে না পেয়ে নান্নু আমাকে পিটিয়ে বেহুশ করে ফেলে। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করলে গ্রেফতার হয় নান্নু। জামিনে ছাড়া পেয়ে আদালত চত্বরেই আমাকে হত্যার হুমিক দেয়। আমি তখন কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। আমার দায়ের করা মামলায় সাক্ষী দেওয়ায় দেলোয়ার মুন্সী নামে এক প্রতিবেশীকেও মারধর করে সে। তার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৭ সালে ১ জুন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতেও আরো একটি মামলা দায়ের করি। এরপরে সে আমার নিজের ঘর থেকে নামিয়ে দেয়। শেষে ২০১৮ সালে আমার বড় ছেলে আলাউদ্দিন বাবুলের ঘরে আশ্রয় নেই।
এদিকে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাল দলিল করে নান্নু আমার ২৮৪ শতাংশ জমির ধান ও একটি রেইনট্রি গাছ কেটে নেয়। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী দুলুফা বেগম ২০১৫ সালে মারা যাওয়ার পর আবুল কাশেম নান্নু দাবী করে তার মা তাকে দলিলমূলে প্রায় ৫ একর জমি দিয়ে গেছে। অথচ আমার স্ত্রীকে কোন দলিল দেইনি। আমার ছেলে যে দলিল তৈরি করেছে তাতে উল্লেখ আছে ১৯৬১ সালের ২০ এপ্রিল আমার স্ত্রী তাকে জমি লিখে দিয়েছে। অথচ আমি দুলুফা বেগমকে বিয়ে করেছি ১৯৬৭ সালের ১৪ মার্চ। বিয়ের ৬ বছর পূর্বে আমার স্ত্রীকে কিভাবে আমি জমি লিখে দিলাম, আবার সেই জমি কিভাবে সে তার ছেলেকে লিখে দিলো সেটাই বোধগম্য নয়। আনসার আলী বলেন, ২০২১ সালের পহেলা জানুয়ারি আমার ৩ একর জমির ধান কেটে নিয়ে যায় নান্নু ও তার লোকজন। ওইসময় বাধা দিলে নান্নু ও তার ছেলে এমরান ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আমাকে আহত করে। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই ঘটনায় আমার বড়ছেলে বাবুল বাদী হয়ে নান্নুসহ ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এত অত্যাচার করার পরও প্রশাসন নান্নুর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি আদালত, থানা সব স্থানে বিচার চাইছি। কিন্তু আমার মেঝ ছেলের অত্যাচার থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করছে না। সংবাদ সম্মেলনে আনসার আলীর বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নান্নুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি বিধায় কোন বক্তব্য সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এইচেকআর