সরোয়ার ঐক্যে নারাজ নগর বিএনপি : কেন্দ্রে নালিশ

বরিশাল মহানগর বিএনপিতে মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্ব মানতে নারাজ একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা সরোয়ারের সাথে ঐক্যের প্রশ্নে স্রেফ না বলে দিয়েছেন কেন্দ্রকে। সেই সাথে সরোয়ারের বিকল্প তরুণ নেতৃত্বের দাবিও তুলেছেন নেতৃবৃন্দ।
মজিবর রহমান সরোয়ারের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শো-কজের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রের তদন্ত কমিটিকে এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক অনুসারীরা। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মহানগর বিএনপি’র একাংশের নেতা মনিরুজ্জামান ফারুক।
এর আগে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এনে বরিশাল মহানগর বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করেন কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রের যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। তার অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে মনিরুজ্জামান ফারুককে শো-কজের নির্দেশ দেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাজাহান। গত মঙ্গলবার মনিরুজ্জামান ফারুক নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে শো-কজের লিখিত জবাব দেন।
জানা গেছে, ‘দীর্ঘ দিন ধরেই বরিশাল বিএনপিতে গ্রুপিং রাজনীতি চলে আসছে। একক আধিপত্যের কারণে বৃহৎ অংশের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন মহানগর বিএনপি’র সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সম্প্রতি সময়ে। সরোয়ারের নেতৃত্ব এড়িয়ে মহানগর বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুকের নেতৃত্বে শুরু হয় নতুন গ্রুপিং। যারা সরোয়ারকে এড়িয়ে পৃথক ব্যানারে মহানগর দলীয় এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এমনকি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায়ও দুই ভাগে অংশগ্রহণ করে মজিবর রহমান সরোয়ার ও মনিরুজ্জামান ফারুক অনুসারীরা।
এদিকে, মহানগর বিএনপিতে মনিরুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধে গ্রুপিং করে বিশৃঙ্খলা এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ করেন সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার। এর প্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে ফারুককে শো-কজ করা হয়।
মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘শো-কজের জবাব দিতে গত সোমবার আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম। এসময় মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি মনিরুল আহসান মনির, আক্তার হোসেন মেবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, সহ-সম্পাদক আ.ন.ম সাইফুল আহসান আজিম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার আবুল হাসান লিমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মঞ্জুসহ অন্তত ১৬-১৭ জন নেতা স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার সাথে ঢাকায় যান।
তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে আমরা ঢাকা শাহাজাদপুরে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও অভিযোগের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির নেতা মো. শাজাহান এর সাথে আমরা সাক্ষাত করেছি। শো-কজের লিখিত জবাদ দেয়ার পরে প্রায় দুই ঘণ্টা নেতার বাসায় আমরা মহানগর বিএনপি’র বর্তমান অবস্থান নিয়ে কথা বলেছি। এসময় তিনি আমাদের জানিয়েছেন বরিশালে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে তার সব কিছুই তাঁর জানা আছে। এর পরেও তিনি দলের স্বার্থে এবং নতুন কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে এক ব্যানারে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য বলেছেন।
ফারুক বলেন, ‘আমরা সরোয়ারকে ছেড়ে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু বিএনপি ছেড়ে যাইনি। দলের মধ্যে আজ যে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে সে জন্য মজিবর রহমান সরোয়ারই দায়ী। ইতোপূর্বে আমি তাকে বলেছিলাম নেতৃবৃন্দকে ডেকে আলোচনা করে দ্বন্দ্বের সমাধান করতে। কিন্তু তিনি কোনভাবেই তাতে রাজি হননি। তাই গ্রুপিংটা এখন এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে এখন আর সমঝোতার সুযোগ নেই।
মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘আমিসহ আমাদের নেতৃবৃন্দ সবাই কেন্দ্র তথা আমাদের নেতা শাজাহান সাহেবকে স্রেফ জানিয়ে দিয়েছি যে মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে কোন আপোষ নয়। তার নেতৃত্ব আমরা মানি না এবং মানবও না। তিনি বরিশাল বিএনপিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে কর্মীদের ব্যবহার করেছেন। কোন তরুণ নেতাকে নেতৃত্বের সুযোগ করে দেননি। এলাকার দারোয়ান দিয়ে পকেট কমিটি করেছেন। তাই আপষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মহানগর বিএনপিতে মজিবর রহমান সরোয়ারের বিকল্প তরুণদের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
এমবি