বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু, আহত অর্ধশত

ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন ও মনোনয়ন বঞ্চিত আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আবিদ নামে এক ছাত্রদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।
রোববার (৯ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের অফিস ভাঙচুর, জিনিসপত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আবিদ ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন।
গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার জানান, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত (রাত ৯টা) কেউ অভিযাগ দায়ের করে নাই। আবিদ নামের একজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
রোববার গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেল মাঠে উপজেলা-পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন ও ধানের শীষের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ছিল। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন। একই দিনে একই দিবস নিয়ে ধানমহালে মহিলা দলের আলোচনা ছিল। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ। এ নিয়ে দুপক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকালে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে ভাঙা মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ। তিনি বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৪-৫ হাজার নারী নিয়ে পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল। ওই অনুষ্ঠানের যিনি প্রধান অতিথি (ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন) তার নির্দেশনায় অর্তকিতভাবে এ সমাবেশে হামলা করা হয়েছে।
আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ বলেন, হামলায় আমার স্ত্রী সাইদা মাসরুরসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ৩০-৪০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। বিএনপি অফিস ও এই সমাবেশের চেয়ার, টেবিলসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, এইমাত্র শুনলাম একজন ছাত্রদল নেতা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। সেই মৃত্যুকে উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা করছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় একটি হোটেলে পালটা সংবাদ সম্মেলন করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন গ্রুপের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ জানান, শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পাপ্পুর ব্যক্তিগত অফিসের হিরণের ভাইসহ লোকজন হামলা করেছে। এ সমাবেশ পণ্ড করতে তারা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার পরিকল্পনা করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩৪টি রামদাসহ সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এরপর আমাদের সমাবেশ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে নেতাকর্মীদের ওপর হিরণের লোকজন মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে হামলা করেছে।
তিনি বলেন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলী আকবর আনিছের বাসভবনে হামলা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান হোসেন খান জুয়েলের অফিসে ভাঙচুর ও টিভি লুট, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি শামছুল হক সামছুর অফিস, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয় ভাঙচুর-হামলা ও জিনিসপত্র রাস্তায় এনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ১০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহিলা সমাবেশে কারা সেটা আমরা জানি না। সেই সময় আমরা মিটিংয়ে ছিলাম।
এইচকেআর