ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Motobad news

নিরাপত্তা নয়, জরিমানার ভয়ে মাথায় হেলমেট

নিরাপত্তা নয়, জরিমানার ভয়ে মাথায় হেলমেট
ছবি: সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে হলে চালক ও যাত্রীদের মাথায় হেলমেট বাধ্যতামূলক। কারোর হেলমেট না থাকলে তিন মাসের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে। দণ্ড ও জরিমানা ঠেকাতে যাত্রীদের জন্য যে হেলমেট ব্যবহার করা হয় তা সাধারণত সাইকেলের হেলমেট, দ্রুতগতির যানে এই হেলমেট কোনোভাবেই কার্যকর নয়। যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটলে মানহীন পাতলা এই হেলমেট কোনোভাবেই সুরক্ষা দেবে না জেনেও কেবল জরিমানা ঠেকাতে এই হেলমেট ব্যবহার করা হচ্ছে।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ক্রমশই বাড়ছে মোটরবাইক যাত্রী সংখ্যা। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অনেকেই বেছে নেন এই বাহন। তবে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়ে চালকদের কোনও বিশেষ ভাবনা নেই, যাত্রীরাও ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সেই হেলমেটই পরছেন।

মোটরযান চলাচল আইনের ৪৯-চ ধারায় বলা হয়েছে, ‘চালক ছাড়া মোটরসাইকেলে একজনের অধিক সহযাত্রী বহন করা যাবে না। চালক ও সহযাত্রীকে যথাযথভাবে হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ।

এজন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) মাসের কারাদণ্ড, বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কাটা যাবে’। কিন্তু হেলমেটের ধরন কী হবে সেটি আইনে উল্লেখ না থাকায় সেই সুযোগটি নিয়ে অরক্ষিত চলাচল চলছে।

নগরীর বাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাতলা হেলমেটগুলো ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে কেনা যায়। যাত্রীদের জন্য রাখা পাতলা প্লাস্টিকের এসব হেলমেটের ফিতা থাকে ঢিলেঢালা। কিছু কিছু হেলমেটে নেই ফিতা আটকানোর ক্লিপও। যাত্রীদের মাথায় এগুলো জুতসইভাবে বসেও না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। গতিসম্পন্ন বাহন দুর্ঘটনার শিকার হলে এই হেলমেট কোনোভাবেই সুরক্ষা দেবে না। তবে বরিশালে ভাড়ায় চালিত বেশিরভাগ মোটরসাইকেলেই যাত্রীদের জন্য রাখা হচ্ছে না অতিরিক্ত হেলমেটের ব্যবস্থা।

যাত্রীদের জন্য হেলমেটের ব্যবস্থা না রাখার কারণ জানতে চাইলে নগরীর জেলখানার মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বাইক চালক সুমন বলেন, আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারি না। আবার হেলমেট রাখলে তা চুরি হয়ে যায়। যে কারণে হেলমেট রাখলেও সেটা কম দামের প্লাস্টিকের হেলমেট রাখতে হচ্ছে। কিন্তু তাও যাত্রীরা মাথায় দিতে চায় না। তারা হাতে নিয়ে বসে থাকে। অনেকে আবার বলে এই হেলমেট পরলে গরম লাগে। তাই বাইকে হেলমেট রাখা হয় না।

নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা আরেক মোটরবাইক চালক স্বাধীন বলেন, মূলতঃ পুলিশের চাপে হেলমেট পরা হয়। যাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়ে কখনও ওইভাবে ভাবি নাই। বিষয়টা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগও নেই, তাই এমনি চলে যাচ্ছে। তবে পুলিশ মাঝে মধ্যে ধরে। তাই হেলমেট মাথায় দেই। না হলে মামলা দিয়ে দেয়।

নগরীর বটতলা এলাকার জুয়েল নামের এক যাত্রী বলেন, প্রতিটি মোটরসাইকেলে যাত্রীদের জন্য হেলমেট রাখা জরুরি। কিন্তু ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে হেলমেটের ব্যবহার নেই বললেই চলে। চালক হেলমেট পড়লেও যাত্রীরা হেলমেট ছাড়াই চলছে। আবার এক মোটরসাইকেলে চারজনও বহন করা হচ্ছে। আবার যারা হেলমেট ব্যবহার করছে তাদের হেলমেট দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটা হেলমেট নাকি ক্যাপ।

রিপন হাওলাদার নামের একজন বাইকার বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলের পেছনে ছোটে। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল চালকদের আটকে মামলা দিচ্ছে হেলমেট না পড়লে। অথচ ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যে প্রকাশ্যে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে সেটা দেখার সুযোগ হচ্ছে না তাদের। এ জন্য ওইসব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রাণহানির শঙ্কা থেকে যায়।

যাত্রীদের ব্যবহৃত মানহীন হেলমেটের বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক বিভাগের কয়েকজন সার্জেন্ট বলেন, ‘হেলমেটের মান যাচাই-বাছাইয়ের কোনও আইনি নির্দেশ নেই। আইন অনুযায়ী শুধু মাথায় হেলমেট না থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

তাছাড়া আমরা হেলমেটের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। চালক লাইসেন্স না থাকার জন্য ছাড় দিলেও হেলমেটের বিষয়টিতে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত মামলা এবং জরিমানা হচ্ছে। ব্যক্তিগত এবং ভাড়ায় চালিত সকল ক্ষেত্রে একই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে।


কেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন