দুই বছরেও চালু হয়নি করোনায় বন্ধ হওয়া পদ্মা ও ধুমকেতু ট্রেন

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্ধের দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে আন্তঃনগর পদ্মা ও ধুমকেতু ট্রেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী থেকে পুনরায় পদ্মা ও ধুমকেতু চালু হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঙ্গে সংযোগ ট্রেন হিসেবে কমিউটার ট্রেন আর চালু হয়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীদের সুবিধার জন্য পদ্মা ও ধুমকেতুর সংযোগ হিসেবে দুপুর ২টা ৪০ মিনিট ও রাত ৯টা ৪০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে শুধু বনলতা ছাড়া আর কোনো ট্রেন চালু নেই। এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-খুলনা-যশোর-পাবনা ট্রেন সার্ভিস অকার্যকর থাকায় এ অঞ্চলের বাসিন্দারা যাতায়াতে অসুবিধায় পড়েছেন।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-রহনপুর অংশের পুনর্বাসন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-পাবনা পর্যন্ত পাবনা এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন চালুর কথা ছিল। তাও চালু হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ইঞ্জিন আর কোচের সংকট থাকায় বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
পেশায় প্রকৌশলী কাউসার আহমেদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কাজ করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অসুস্থ বাবার খোঁজ-খবর ও দেখভালো করতে নিয়মিত আসতে হয় গ্রামের বাড়িতে। কাউসার আহমেদ বলেন, সপ্তাহে একদিন ছুটি পান। অসুস্থ বাবাকে দেখতে প্রত্যেক সপ্তাহের ছুটির আগের সন্ধ্যায় অফিস শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সারাদিন বাসায় থেকে আবার রাতে রওনা দিতে হয় পরেরদিন সকালে অফিস করার জন্য। রাত ৯টা ৪০ মিনিটের কমিউটর ট্রেনে রাজশাহীতে গিয়ে ধুমকেতু ট্রেন ধরতেন। কিন্তু করোনাতে বন্ধের পর আর সেই সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কমিউটর ট্রেন বন্ধ থাকায় বাসে যেতে হয়। বাসে অনেক সময় জ্যামের কারণে ৮-১০ ঘণ্টা লেগে যায়। পরেরদিন অফিস করতে পারিনা। ফলে এখন আর প্রত্যেক সপ্তাহে আসতে পারিনা। কি কারণে দুই বছর থেকে এভাবে ট্রেনটি বন্ধ আছে জানিনা। কিন্তু এটা খুব দ্রুত চালু করা উচিত।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মাহবুব হাসান জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পদ্মা ও ধুমকেতু চলে। পাশ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দাদের জন্য দুটি কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়। এই কমিউটার ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ রাজশাহী গিয়ে এই ট্রেন দুটিতে করে ঢাকা যেত। করোনাকালীন সময়ে পদ্মা ও ধুমকেতু ট্রেন বন্ধ করা হয়। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে রাজশাহী থেকে আবারও এই দুটি ট্রেন চালু হয়। কিন্তু এখনও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কমিউটার ট্রেন দুটি চালু চালু হয়নি।
কৃষি উদ্যোক্তা সাকিল আহমেদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পদ্মা ও ধুমকেতু ট্রেনের সংযোগ কমিউটার ট্রেন দুটি বন্ধ থাকায় এই জেলার মানুষ রাজধানীতে যাতায়াত নিয়ে খুব সমস্যায় রয়েছে। রাজশাহী থেকে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু থাকলে শুধুমাত্র সংযোগ ট্রেন না থাকায় এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, এনিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংযোগ ট্রেন দুটির চালক না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না। নতুন চালক নিয়োগ দেয়া হলে চালু হতে পারে। ট্রেন দুটির চালক অবসরে চলে গেছেন বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি সংযোগ ট্রেন দুটি চালু করা হোক। এনিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে সশরীরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হলে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ইঞ্জিন ও কোচ সংকট থাকায় এ ট্রেনগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদানুযায়ী পাওয়া গেলে ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করা হবে।
ফেরদৌস সিহানুক শান্ত / চাঁপাইনবাবগঞ্জ
এমবি
