মোটরসাইকেল কিনে মহাবিপদ

‘মোটরসাইকেল কিনে তা আবারও বিক্রির পর পুলিশের হাতে পাকড়াও। এরপর বুঝলাম চোরাই মোটরসাইকেল কিনেছিলাম। সেই চোরাই মোটরসাইকেল কেনাবেচার অপরাধে জেল খাটতে হয়েছে। এখনও এই মামলায় হাজিরা দিয়ে আসছি’—বলছিলেন ক্ষুদ্র মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী মো. আলামিন। চোরাই মোটরসাইকেল কেনাবেচার দায়ে অভিযুক্ত রাজধানীর উত্তরার এই ব্যবসায়ী।
শনিবার (১২ মার্চ) আলামিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত দেড় বছর ধরে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নিজের বাসার নিচেই গ্যারেজে রেখে মোটরসাইকেল কেনাবেচা করছি। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা লিটন দেওয়ানের সঙ্গে অনলাইনে পরিচয়। তার কাছ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১২৫ সিসি ডিসকভার মোটরসাইকেল কিনি। ইয়াসিন আলী ওরফে লিটন দেওয়ান নিজেকে মোটরসাইকেলটির মালিক দাবি করেন। তিনি মোটরসাইকেলের নাম ট্রান্সফার কাগজ এবং ট্যাক্স টোকেনের কপিও দেন। তার কথা বিশ্বাস করে আমিও বিআরটিএ থেকে কোনও তথ্য নিতে যাইনি। সরল বিশ্বাসে মোটরসাইকেলটি ৮৩ হাজার টাকায় কিনি। আর এই মোটরসাইকেল কিনে খাল কেটে কুমির এনেছি নিজের জীবনে।
৮৩ হাজার টাকায় কেনা ডিসকভার ১২৫ সিসির বাইক আলামিন বিক্রি করেন ৯৩ হাজার টাকা। এটি কেনেন কাপাসিয়ার বাসিন্দা নুরুল। সেই নুরুল আরও কিছু বাড়তি টাকায় নেত্রকোনার শরিফের কাছে বিক্রি করে মোটরসাইকেলটি। নেত্রকোনা শরীফ কাগজপত্র মিলিয়ে দেখতে বিআরটিএ-তে যোগাযোগ করেন। তখন সেখানে ঢাকার ইয়াসিন আলি ওরফে লিটন দেওয়ানের নামের জায়গায় ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির মালিকানায় মোটরসাইকেলটির তালিকাভুক্তির বিষয়টি নজরে আসে। বাইকের প্রকৃত মালিক ইকবাল হোসেন হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যেখানে উল্লেখ করা হয় ২০২১ সালের ২৯ জুন হাজারীবাগ থানা এলাকার জাফরাবাদের বিজয় লেনের একটি বাসা থেকে চুরি হয়ে যায় মোটরসাইকেলটি। শরিফ মোটরসাইকেল মালিক ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
মোটরসাইকেল বিক্রি সূত্র ধরে নুরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। নুরুল আলামিনের কাছ থেকে মোটরসাইকেলটি কেনার বিষয়ে তথ্য দেয় পুলিশকে। সে তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা থেকে আল-আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মোটরসাইকেলটি কেনার বিষয়ে। কিন্তু আলামিন দেওয়ানের বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে না পারায় চুরির মামলায় পড়তে হয় তাকে।
আলামিন বলেন, মোটরসাইকেলের বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য না জেনে মোটরসাইকেল কিনে ১১ দিন কারা ভোগ করতে হয়েছে। এখনি জামিনে আছি। এই ১১ দিন আমার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে। টাকা দিয়ে যেন নিজের বিপদ কিনেছি।
সম্প্রতি গাড়ি চোরাইচক্রের অন্যতম মূল হোতা ইয়াসিন ওরফে লিটন দেওয়ানকে রাজধানীর শাহ আলী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার দুই সহযোগী কেউ গ্রেফতার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে তিনটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চোরাই মোটরসাইকেল কেনাবেচায় জড়িত লিটন দেওয়ান। গাড়ি চুরির পর সেসব গাড়ি মোটরসাইকেল অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করতো। প্রতিটি গাড়ির নিচে মালিক পরিচয় দিয়ে নকল কাগজপত্র বানাতো। চোরাই গাড়ি বিক্রির পর তাদের যোগাযোগের নাম্বার বন্ধ করে দিতো, যে কারণে পরবর্তীতে লিটন দেওয়ানকে আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হতো না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত বলে আসছিলেন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল কেনাবেচার বিষয়ে সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে কেনা কিংবা বিক্রির জন্য। এরপরও অনেকে টাকা খরচ করে বাইক কিনে নিজেদের বিপদ যেকে আনছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার গনমাধ্যমকে বলেন, মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকার যে কোনও গাড়ি কেনার আগে বিআরটিএ থেকে মালিকানা এবং গাড়িটির তথ্য সম্পর্কে আগে নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে চোরাই গাড়ি কেনার অপরাধে মামলায় পড়তে হবে, জেল খাটতে হবে। এসব ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার পরও যারা জামিনে বের হচ্ছে তাদের বিষয়ে আমরা নজরদারি রাখছি।
এইচকেআর